
প্রকাশ:
মঙ্গলবার, মার্চ ১১, ২০২৫ || ০৬:৪৬
দেখা হয়েছে 358
মো. আব্দুল আউয়াল, ঈশ্বরগঞ্জ ( ময়মনসিংহ)
হোম /
খবর
ছবি :মুক্তদিন
ঈশ্বরগঞ্জের নৈশপ্রহরী আরমান হত্যা
পুলিশের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ
প্রকাশ:
মঙ্গলবার, মার্চ ১১, ২০২৫ || ০৬:৪৬
358
মো. আব্দুল আউয়াল, ঈশ্বরগঞ্জ ( ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী আরমান হোসেন (২৪) হত্যা মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী। মামলায় উল্লেখিত আসামীদের না ধরে সাধারণ মানুষদের হত্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে পুলিশ। চার জনকে আটকের পর ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানা যায়, গত বছরের১ অক্টোবর ভোরে জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় নৈশ প্রহরী আরমান হোসেনকে হত্যা করা হয়। নিহত আরমান হোসেন স্থানীয় মো. লোকমান হোসেনের ছেলে। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর সে জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী হিসাবে যোগদান করেন তিনহ।
আরমান হত্যার বিষয়টি নিয়ে ঘটনার দিন রাতেই নিহতের মা ঝরনা আক্তার বাদি হয়ে ৬জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ওই দিনেই আরমান হত্যার প্রধান আসামী মাসুদকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ আটকের কিছু দিন পরই আসামী মাসুদ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। বাদীর অভিযোগ মাসুদ গ্রাম পুলিশের সদস্য হওয়ায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ওসি ওবায়দুর রহমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে নানা হুমকী দিচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওসি ওবায়দুর রহমানের নির্দেশনায় এসআই নজরুল ইসলাম এলাকায় হঠাৎ রাতের বেলা অভিযান চালিয়ে আরিফ বিল্লাহ বাচ্চু (৪৬), রিফাতুল ইসলাম শাহীন (২২), বাবুল মিয়া (১৮) ও রোমান মিয়া (১৭) নামের ৪জন কে থানায় নিয়ে যায় । জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের উপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে আটকদের পরিবারের কাছে ৫লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। অন্যতায় আরমান হত্যা মামলায় তাদের ফাসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। আটক কিশোর বাবুলের পিতা মোনায়েম হোসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতা ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুলের সাথে ৬০ হাজার টাকা রফা করে পরিশোধ করেন। পরে আটক কিশোরদের পরদিন রাতে মুক্তি দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী রিফাতুল ইসলাম শাহীন বলেন,
রাত ১২টার দিকে আমি আমার বাড়িতে ফোনে বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আট থেকে নয়জন পুলিশ আমাকে ঘিরে ধরে বলে বাজারে যেতে হবে। ওখানে ওসি স্যার দাড়িয়ে আছে তোমার সাথে কথা বলবে। বাজারে আনার পর তারা পুলিশের গাড়িতে তুলে ফেলে। থানায় নিয়ে গিয়েই আমাকে এবং আরেক কিশোর রোমানকে হ্যান্ডকাপসহ একটি দেওয়ালের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। ওই অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। আরমানকে কারা হত্যা করেছে সেটা জানতে চায়। আরমানকে হত্যার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমি ঢাকায় কাজ করি। একমাস পর বাড়িতে এসেছি। তবুও আমাকে আরমান হত্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
বাবুল মিয়া বলেন, সম্ভবত রাত ২টা বাজে। বাসায় শোয়ে আছি। এমন সময় হঠাৎ বাড়িতে পুলিশ যায়। আমি আব্বাকে ডাক দেই। তখন এসআই নজরুল ইসলাম আমাকে তার সাথে বাজারে যেতে বলে। আমি বাজারে গিয়ে দেখি পুলিশের গাড়িতে শাহীন ও রোমন বসা তখন আমাকেও গাড়িতে তুলা হয়। থানায় নিয়েই আমার চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। আরমানকে কারা মেরেছে সেটা জানতে চায়। আমি কিছুই জানি না বললে তারা আরো বেশি মারতে থাকে। পরের দিন এসআই নজরুলের সাথে আমার বাবার কথা হয়। ওই সময় বাবার কাছে ৫লক্ষ টাকা চায়। বাবা আমাকে মারধর দেখে ও হত্যা মামলায় ফাসিয়ে দিতে পারে এমন ভয়ে কিছু টাকা দিতে রাজি হয়। পরে চার জনে ১৫হাজার করে মোট ৬০হাজার টাকা দিয়ে আমাদের মুক্ত করে। মুক্তি দেওয়ার আগে সাদা কাগজে স্বাক্ষরসহ তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি কিংবা কোনপ্রকার নির্যাতন করা হয়নি মর্মে আমাদের কথা ভিডিও রের্কড করে রাখে।
বিষয়টি নিয়ে জাটিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আবুল বেপারী বলেন, ছেলেগুলারে অহেতুক ধরে নিয়ে যায়। শুনেছি টাকা দিয়ে তারা ছাড়া পেয়েছে।
আরমান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর কোন প্রকার সন্দেহ না হওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আটকদের কোন নির্যাতন করা হয়নি এবং তাদের কাছ থেকে কোন টাকাও নেওয়া হয়নি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি আটককৃতদের জিজ্ঞাবাদের পর সন্দেহ না হলে ছেড়ে দিতে বলেছি। তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার টাকার লেনদেন যেন না হয় এ বিষয়েও মামলার আইওকে সতর্ক করেছি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর কিছুটা সন্দেহ হওয়ায় তাকে ওই মামলার আইও থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।