ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তরে একটি ক্লিনিকে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা ফার্স প্রাথমিকভাবে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে। পরে সংবাদমাধ্যম বিবিসি সূত্রে ১৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা আইআরআইবি সূত্রেও ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।
তেহরানের ডেপুটি গভর্নর হামিদ রেজা গৌদারজি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, তেহরান বিস্ফোরণের সঙ্গে নাশকতার কোনো যোগসূত্র নেই। এটি একটি দুর্ঘটনা। গ্যাস লিক হয়েই সিনা আথার নামে ওই ক্লিনিকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তিনি দাবি করেন। ইরানের উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরচি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে নিহত ১৯ জনের মধ্যে ১০ জনই নারী। বাকিরা পুরুষ। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে। বিস্ফোরণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ভিডিও ক্লিপ পোস্ট হয়। একটি ভিডিওতে উত্তর তেহরানের ওই ক্লিনিকে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিস্ফোরণের পর বড় মই দিয়ে ওই ক্লিনিক ভবনের ছাদে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে তেহরানের ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র জালাল মালেকি জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের জেরে ক্লিনিক ভবনে আগুন লেগে গিয়েছিল। ফায়ার সাভির্সের কর্মীরা তা নিভিয়ে ফেলেছেন। বিস্ফোরণের সময় ওই ভবনের ভেতরে ২৫ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। ইরানের বার্তা সংস্থা ইসনাকে মালেকি জানান, হতাহতদের মধ্যে অনেকেই ক্লিনিকে ওপরের তলায় অপারেশন রুমে ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তাপ ও ঘন ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।
গত সপ্তাহেই তেহরানে একটি সামরিক অঞ্চলের কাছে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, একটি গ্যাস স্টোরেজের ট্যাঙ্ক লিক করেই ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। যদিও তেহরানের পূর্বে আলবোরজ পর্বতমালার কাছে বিকট শব্দে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। স্যাটেলাইট ছবি থেকে ধারণা, ওই এলাকায় মাটির নিচে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ কেন্দ্রে বিস্ফোরণটি ঘটেছে। ছবিতে দেখা যায়, তেহরানের আকাশে বিস্ফোরণের এক বিশাল আগুনের গোলা। যদিও ইরান এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
আরব নিউজ সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের কারণে তেহরানের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠেছে, ভেঙেছে জানালার কাচ। স্থানীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঘটনাস্থলের খুব বেশি ফুটেজ দেখায়নি। তারা শুধু রাস্তায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরিত সিলিন্ডার দেখিয়েছে। কেন এই বিস্ফোরণ, সে বিষয়েও তেমন কিছু উল্লেখ করেনি।
ওই ঘটনার পর ইরানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডেভুড আবদি বলেন, ‘গ্যাস লিকের কারণে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে বলতে পারছি না, ঠিক কী কারণে গ্যাস লিক হয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’
আরব নিউজ বলছে, ডেভুড আবদি ওই এলাকাকে স্থানীয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিস্ফোরণের পর সেখানে সেনাসদস্যদের আগুন নেভাতে দেখা গেছে। যদি স্থানীয় এলাকায় এ রকম ঘটনা ঘটে, তা হলে সাধারণত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম ঘটনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এক প্রতিবেদন বলছে, ইরানের যে এলাকাটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ আছে। এ সুড়ঙ্গগুলো মাটির বেশ গভীরে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সামরিক গবেষণা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের কাজ হয়ে থাকে সেখানে।