ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনকে সফল করতে ত্রিশালের অভ্যন্তরিন সড়কে চলাচলকারী ৫টি শালবনসহ ৩৭টি বাস ভাড়া করে স্থানীয় সাংসদ হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানীর কর্মী সমর্থকরা যোগ দেন সম্মেলনে। মাদানী সমর্থিত আওয়ামী নেতাকর্মীদের বহন করার অপরাধে ত্রিশাল-ভালুকা সড়কে চলাচলকারী পাঁচ শালবন বাসকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রিপ সিরিয়াল আউট করেছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিকরা।
জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে সফল করতে ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সাংসদ হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানীর ব্যানারে আওয়ামী নেতাকর্মীরা যোগদান করেন সম্মেলনে। মাদানী সমর্থিত নেতাকর্মীদের সম্মেলনস্থলে যাওয়া আসার জন্য ত্রিশালের অভ্যন্তরিন সড়কে চলাচলকারী ৫টি শালবনসহ ৩৭ টি বাস ভাড়া করেন। বাসগুলো ভাড়া নিতে সম্মেলনের ৪ দিন আগেই বাস মালিক ও চালকদের কাছে অগ্রীম বায়না বাবদ টাকা দেন মাদানীর ছেলে হাসান মাহমুদ। সম্মেলনের আগেরদিন ওই ৫ শালবন মালিক ও চালকদের কাছে বাস দাবি করেন ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। সম্মেলনের ৪ দিন আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদের কাছ থেকে বায়নার টাকা হাতে নেওয়ায় মালিকপক্ষ ও চালকরা বাস দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে মাদানী সমর্থিত নেতাকর্মীদের বহন করা পাঁচ শালবন বাসকে রোববার (৪ ডিসেম্বর) অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রিপ সিরিয়াল আউট করেছে জেলা মোটর মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মো. নূরুল হুদা। যদিও জেলা মোটর মালিক সমিতির প্যাডে তিনি উল্লেখ করেছেন, ০৩/১২/২২ ইং তারিখে নিয়মভঙ্গ করে চলাচল করায় ০১৯৬, ০১৮৮,০০৯৬,০১৬০, ০১৫১ নম্বরের গাড়ির ট্রিপের সিরিয়াল আউট থাকবে।
তবে এ ব্যাপারে চালকরা জানিয়েছেন, কোন নিয়ম ভঙ্গের কারনে নয়, মাদানী সমর্থিত নেতাকর্মীদের সম্মেলনস্থলে নিয়ে যাওয়ায় এসেছে ওই সিদ্ধান্ত। এমন অনাকাঙ্খিত সিদ্ধান্তে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও ত্রিশাল মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালামের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ মালিকপক্ষ ও চালকদের। বরখাস্তের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিকরা।
শালবন চালক শাহজাহান বলেন, আমার একমাত্র উপার্জনের পথ বাস চালানো। এই উপার্জনের আয়ে চলে চার সন্তানের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ। গাড়ি বন্ধ থাকলে সংসারের প্রতিদিনের খরচ ছাড়াও ছেলেকে পলিটেকনিক্যালে ভর্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। দলীয় রেশারেশিতে বিপাকে পড়েছি আমরা।
চালক মোখলেছ জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও ত্রিশাল মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ভাইকে গাড়ি দেইনি বলে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
গাড়ি মালিক সোহেল জানান, এই নোটিসের পর জেলা মোটর মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের কাছে এর কারন জানতে চাইলে, তিনি ত্রিশাল মালিক সমিতির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, কালাম কাকাকে গাড়ি না দিয়ে আমাদেরকে দেওয়ার ক্ষোভে সম্মেলনের আগের দিনই চালকদের শাসিয়ে ছিলেন তিনি। সেই ক্ষোভ ঝাড়তেই ওই সিদ্ধান্ত।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, যে পাঁচটি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, জেলা মটর মালিক সমিতির দেয়া তালিকা অনুযায়ি তাদের হাতে ভাড়া বাবদ বায়নার টাকা দেয়া হয়েছিল। অন্য কোন কারনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।