সন্ত্রাসী কায়দায় নিজ ভাইকে গাছে বেধে মারধর করে বাড়ি দখল ও বসত ভিটা থেকে বিতারিত করেছে এক ভূমিদস্যুর লাঠিয়াল অন্য ভাইয়েরা। এতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার স্বামী হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে আর বাড়িছাড়া হয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী বিচারের দাবীতে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে।
এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের কয়া গোলাহাট কামারপাড়া এলাকায়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সহায়তা না করায় চরম দূর্ভোগে দিনাতিপাত করছে অসহায় নারী। বন্ধ হয়ে গেছে দুই শিশুর লেখাপড়াসহ স্বাভাবিক জীনব যাত্রা।
সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত এই দূরাবস্থা নিরসনে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজের কাছে সুরাহার আবেদন জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। সোমবার (১৩ জুন) সকাল ১১ টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই নিবেদন পেশ করেন উত্তরা ইপিজেড’র কর্মী মুক্তা বেগম।
সংবাদকর্মীদের কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি জানান, আমার শ্বশুর মৃত সহর উদ্দীন তার জীবদ্দশায় অনেক সম্পত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত পৈত্রিক ভিটায় মাত্র ১৪ শতক জমি রেখে গেছেন। যার মধ্যে বাড়ি ও বাঁশঝাড় অবস্থিত। তার মৃত্যুর পর আমার স্বামী নুর মোহাম্মদসহ ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে মৌখিকভাবে বাটোয়ারা হয়ে বসত বাড়ির অংশে ৪ ভাই ঘর করে বসবাস করছে।
আমার স্বামীর অংশ ২.১৬ শতকসহ এক ভাই আলমের অংশ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ও বোন কোহিনুরের অংশ স্বেচ্ছায় দেয়ায় আমরা বাড়ি করেছি। সম্প্রতি প্রতিবেশী মৃত সাইল্যা মামুদের ছেলে হাজী মোসলেম উদ্দীন দাবী করছেন যে বসতভিটার বাঁশঝাড়ের ৮ শতক জায়গা তার। তিনি আমার শ্বশুরের কাছে কিনে নিয়েছেন। কিন্তু কোন কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না। তবুও জবরদস্তি ওই বাঁশঝাড় দখল করে রেখেছে এবং আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে টিন দিয়ে বেড়া দিয়েছে।
আমার স্বামী ভাই বোনদের মধ্যে ছোট। বড় ভাইয়েরা বাঁশঝাড় দখলকারী হাজী মোসলেমের নিয়মিত দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। সেই সুবাদে তারা মোসলেমের ইশারায় চলে। মোসলেম বাঁশঝাড় নেয়ায় ৫ ভাই এখন অবশিষ্ট ৬ শতকের মধ্যেই ভাগ চাওয়ায় বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
ভাইদের কথা এখন প্রত্যেকে ১.১৬ শতক করে জমি পাবে এবং এক ভাই আলম ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তার অংশ দেয়ার কথাও অস্বীকার করছে। এমতাবস্থায় আমার স্বামী তার অংশসহ বোনের অংশ মিলিয়ে মাত্র ২ শতক জমি পাবে। তাই অতিরিক্ত জায়গা জুড়ে অবস্থিত বাড়ি ভাঙ্গতে হবে।
তাদের এমন কথায় প্রতিবাদ করায় এনিয়ে কয়েক মাস যাবত ঝগড়া বিবাদ চলে আসছে। গত মার্চ মাসের ১৭ তারিখে আমরা স্বামী-স্ত্রী নিজ নিজ কাজে গেলে ইতোপূর্বে বাড়ির পানি বের হওয়ার নালা নিয়ে সৃষ্ট ঝগড়ার জের ধরে বাড়িতে হামলা করে ভাঙ্চুর চালায় প্রতিবেশী মোসলেম (৭০), তার ছেলে আবু বক্কর (৩২), মোশারফ (৪০), আমার ভাসুর নুর আলম (৪০), নুর ইসলাম (৫৫) ও তার ছেলে মানিক (৩০)।
এসময় আমার মেয়ে বাধা দিলে হামলাকারীর তাকে কিল ঘুষি মারে এবং চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে শরীরের কাপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানি ঘটানোর চেষ্টা করে স্পর্শ কাতর স্থানে আঘাত করে। এতে আত্মরক্ষার্থে চিৎকার করলে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে গলা চেপে ধরে।
পরে খবর পেয়ে আমার মা রহিমা এসে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশকে জানালে এবং আশেপাশের লোকজন আসলে ঘরের জিনিসপাতি ভাঙ্চুর করে নানা হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারা সটকে পড়ে। মেয়ের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় তাকে ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তারা দূর্দান্ত প্রকৃতির, দাঙ্গাবাজ ও পরধন লোভী হওয়ায় কারনে অকারনে আক্রোশবশতঃ প্রায়ই গায়ে পড়ে বিবাদ বাধিয়ে আসছে। তাদের এহেন আচরণে আমরা দীর্ঘ দিন থেকে অপমানিত লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছি। তাই বিষয়টা নিয়ে সৈয়দপুর থানায় অভিযোগ দেই। পুলিশ এসে তদন্ত করে গেলেও কোন সুরাহা হয়নি।
এমনকি পৌর প্যানেল ও ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিন হোসেন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সাবিয়া বেগমকে দায়িত্ব দিলে তারা সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো আমাদেরকেই হয়রানী করছেন। কারণ কাউন্সিলর শাহিন হোসেন ভূমিদস্যু হাজী মোসলেমের আত্মীয়।
এরই মাঝে গত ৮ জুন বুধবার দুপুর ১ টায় আমার স্বামীকে মোবাইল বাড়িতে ডেকে নেয় তার ভাই নুর আলম, নুর ইসলাম, নুরুল হক, নুর আমীন। নুর মোহাম্মদ অটো চালানো বন্ধ রেখে বাড়িতে পৌঁছামাত্রই তাকে একা পেয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সংঘবদ্ধভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আহত করে তার ভাইয়েরা।
এক পর্যায়ে তাকে সুপারী গাছে রশি দিয়ে বেধে রেখে এলোপাথাড়ি মারপিট করে। বেধড়ক অমানবিক নির্যাতনের ফলে জ্ঞান হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে রাস্তায় ফেলে রাখে। দীর্ঘ প্রায় ২ ঘন্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে।
আমার ছেলে মোনায়েম (৮) ও মেয়ে আর্নিকা আক্তার (১৬) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবং আমি উত্তরা ইপিজেড’র কর্মস্থান থেকে বাসায় ফিরে দেখি ঘরে তালা মেরে জোড়পূর্বক দখল করে নিয়েছে আমার ভাসুরেরা। এর প্রতিবাদ করে ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে তারা আমার উপরও চড়াও হয়। ফলে প্রাণ ভয়ে আমার বাবার বাড়িতে অবস্থান নিয়েছি।
বাড়িতে যেতে না পারায় আমার চাকুরীর জরুরী ডকুমেন্ট, মামলার কাগজপত্র ও বাচ্চাদের বই খাতা আনতে পারছিনা। এতে শিশু দুটির লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই সংকট নিরসনে কাউন্সিলর ও পুলিশকে বার বার জানালেও তারা কোন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। ফলে চরম অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছি।
মূলতঃ হাজী মোসলেম একজন ভূমিদস্যু। তিনি আমার শ্বশুরের অনেক জমিই কৌশলে লিখে নিয়েছে। এখন কাগজপত্র ছাড়াই বাঁশঝাড় দখল করে রেখেছে। এভাবে সে টাকা আর জনবলের প্রভাবে আরও অনেকের সাথে অন্যায় করে চলেছে। তার টাকা খেয়ে পুলিশও বেআইনী কাজ করছে। আমরা এর সুবিচার চাই।
এব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে কথা বললে তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করে এনিয়ে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।