স্বামী স্ত্রীর দীর্ঘ ১৭ বছরের সুখের সংসার। সামান্য দাম্পত্য কলহের জের ধরে প্রায় ছয় মাস আগে স্ত্রী আকতারা বানুকে (৩৬) তালাক দিয়েছিলেন কৃষক স্বামী শাহানুর ইসলাম (৪২)। এতে ভেঙে যায় ওই দম্পতির সংসার। এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করলে অবশেষে বিচারকের হস্তক্ষেপে পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে আবারো সংসার শুরু করলো ওই দম্পতি।
রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে বিচারকের খাস কামরায় মাওলানা ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের আবারো বিয়ে দেওয়া হয়। অবশেষে তিন শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং আদালতের বিচারকের কথা শুনে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া দম্পত্তি আবার বিয়ে করলেন।
জানা যায়, জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া এলাকার কৃষক শাহানুর ইসলাম (৪২)। তিনি দাম্পত্য কলহের জেরে প্রায় ছয় মাস আগে স্ত্রী আকতারা বানুকে (৩৬) তালাক দিয়েছিলেন। এতে ভেঙে যায় ওই দম্পতির ১৭ বছরের সংসার। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবা-মা দুজনেই বিপাকে পড়েন তাদের দুই মেয়ে এক ছেলে। এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুকের দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন স্ত্রী আকতারা বানু। মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযক্তের নামে সমন জারি করে আদালত। ওই মামলায় রোববার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। তার প্রস্তুতি ছিলো আদালতেই দেনমোহরের এক লাখ এক হাজার টাকা পরিশোধ করে দিবেন স্ত্রীকে। কারাগারে গেলেও স্ত্রীর সাথে তিনি আর সংসার করবেন না। তবে আদালতের এজলাসে উপস্থিতিরি পর ঘটে গেল নাটকীয় ঘটনা।
আদালতে অন্যদের সাথে তাদের তিন সন্তানও উপস্থিত হয়েছিলেন। সন্তানদের দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তাদের বাবা-মা। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তিন সন্তানের দিকে চেয়ে তাদের কলহ ভুলে সংসারে ফেরার অনুরোধ জানান। স্বামী স্ত্রী দুজনেই কিছুক্ষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে যান। তারপর এক পর্যায়ে দুজনেই সংসারে ফিরতে সম্মত হন সন্তানদের সুখের কথা চিন্তা করে।
এরপর বিচারকের খাস কামরায় মাওলানা ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক এক হাজার টাকা নগদ দেনমহরানায় তাদের আবারো বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পড়ান আদালত চত্বরের মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক। আপোষনামা দাখিল করার পর আইনী প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন ওই দম্পতি।
শাহানুর ইসলাম বলেন, স্বামী স্ত্রীর মাঝে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কলহ লেগেছিল। তাতেই স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিল। আমি আনতে গেলেও সে না এসে আমার নামে মিথ্যা নারী নির্যাতন দমন আইনে ও যৌতুকের দাবিতে মামলা করে। এতে আমি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যাই। তখন আমি বলি যে ভাবেই হোক আমার স্ত্রী কে তালাক দিবো আর তখন দেনমোহরের টাকা নিয়ে আদালতে উপস্থিত হই তখন আদালতের বিচারক আমাদের সন্তানদের দেখে আপোষ করে দিয়ে পুনরায় আবার মাওলানা ডেকে এনে বিয়ে পড়িয়ে দেন। আমি আমার স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসি। তালাকের পর সন্তানদের নিয়ে খুব দুঃচিন্তায় ছিলাম।
আকতারা বানু জানান, ১৭ বছর ধরে সংসার করার পর হঠাৎ করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয় তখন আমি আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালতে হাজিরা দিতে আসি সন্তানদের নিয়ে। তখন আদালতের বিচারক সন্তানদের মুখের দিক দেখে তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মিমাংসা করে দেন। আমাদের সংসারে যাতে আর ঝগড়া না লাগে সে দিকে লক্ষ রাখবো।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম তাদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক মহোদয় আমাদের সেই সুযোগটি করে দিয়েছেন।
আসামী পক্ষের আইনজীবী হাজিজুর রহমান বলেন, খুব সামান্য বিষয়েই তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারক মহোদয়ের সাথে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এই বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেলো।