সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারে প্রস্তাবিত পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণের জন্য নির্ধারিত রেকর্ডকৃত জায়গা দখল করে স্থায়ী ঘর নির্মাণের অভিয়োগ উঠেছে সেলিম মিয়া নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি মো. সেলিম মিয়া গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য রেকর্ডকৃত ওই জায়গা দখল করে স্থায়ী ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ঘর নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন।
জানা গেছে, আশির দশকে তৎকালিন বিএনপি সরকারের আমলে এলাকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বাদশাগঞ্জ বাজারে একটি পুলিশ ফাঁড়ি করার প্রস্তাব গ্রহন করা হয়। এরই লক্ষে ১৯৮২ সালে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা মৃল্য স্বাব্যস্ত করে বাদশাগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে ট্রলার ঘাট সংলগ্ন আবুল বশর চৌধুরী ও নূরুল বশর চৌধুরীর মালিকানাধিন বৌলাম মৌজায় ১৩২ খতিয়ানের ৫৯৫ দাগের মোট ৪১ শতংশ জায়গার মধ্যে ৮ শতাংশ জায়গা তাদের কাছ থেকে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শকের নামে সাব কাউলা দলিল মৃলে ক্রয় করা হয়।
পাশাপাশি ধর্মপাশা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ওই স্থানে তাৎক্ষনিকভাবে একটি সাইবোর্ডও লাগানো হয়। তবে নানা জটিলতার কারনে ওই স্থানে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি নির্মান করা না হলেও তখন থেকেই ওই জায়গাটি ধর্মপাশা থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই রক্ষণা -অবেক্ষণ করে আসছিল।
এ দিকে একই মালিকের কাছ থেকে একই দাগে ১৩ শতাংশ জায়গা ১৯৮৪ সালে স্থানীয় বিএনপি নেতা সেলিম মিয়া ক্রয় করে সেখানে তিনি বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু সুচতুর ওই বিএনপির নেতা গোপনে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য নির্ধারিত ওই স্থান থেকে পুলিশের দেওয়া সাইন বোর্ডটি সরিয়ে ফেলেন এবং তিনি ওই জায়গা দখল করে রাতারাতি স্থায়ী ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরে বিষয়টি বাজারের ব্যবসায়ীদের নজরে আসলে তারা পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শুক্রবার রাত ৮ টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য নির্ধারিত জায়গায় ঘর নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন।
অভিযুক্ত বিএনপির নেতা মো. সেলিম মিয়া বলেন, আমার রেকর্ডকৃত জায়গায় থাকা রান্নাঘরটি ভেঙে যাওয়ায় আমি সেটি মেরামতের কাজ করছিলাম। কিন্তু পুলিশ এসে আমার সেই ঘরের কাজ বন্ধ করে দেয়। তিনি আরো বলেন, ওই জায়গা নিয়ে আদালতে পুলিশের দায়েরকৃত একটি মামলাও চলমান রয়েছে। তবে মামলার রায়ে যদি আমাকে ওই জায়গা ছাড়তে হয়, আমি সঙ্গে সঙ্গেই জায়গা ছেড়ে দিব।
বাদশাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সহ সভাপতি আবু তাহের সোনা মিয়া বলেন, তৎকালীন সময়ে এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে আমাদের বাজারের ব্যবসায়ীদের চাঁদায় পুলিশ ফাঁড়ির জন্য সেখানে ওই ৮ শতাংশ জায়গা ক্রয় করা হয়। কিন্তু পুলিশ ফাঁড়ির জন্য নির্ধারিত ওই জায়গাটি ধীরে ধীরে স্থানীয় বিএনপি সেলিম মিয়া দখলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা সেলিমের কাছ থেকে ওই জায়গাটি উদ্ধার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।সেলবরষ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বেনুয়ার হোসেন খান পাঠান বলেন, স্থানীয় একজন বিএনপি নেতা পুলিশ ফাঁড়ির জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায়না। আর এ বিষয়টি আমরা আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ইন্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মহোদয়কেও জানিয়েছি। তবে অনতি বিলম্বে ওই জায়গাটি উদ্ধারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সেলিম তার ভেঙে যাওয়া একটি অস্থায়ী রান্নাঘর মেরামত করছিল। তবে পুলিশ ফাঁড়ির জায়গা নিয়ে আদালতে চলমান মামলাটির রায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে স্থায়ীভাবে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে আমরা তাকে নিষেধ করেছি।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে আপনার মাধ্যমে এ সংবাদটি পাওয়াতে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তবে আমি এখনি ধর্মপাশা থানার ওসিকে বলে দিচ্ছি ওই জায়গা নিয়ে আদালতে চলমান মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে যাতে করে কেউ কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে।