নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদের পানি ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে ব্যাপক চাপ পড়ছে।
সম্পাহ ধরে প্রচন্ড বাতাস। দুদিন ধরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, অপরদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টপাত অব্যাহত থাকায় ওজানের ঢলে আজ (২০ এপ্রিল) বুধবার সকাল পর্যন্ত বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি। নির্ঘুম কৃষকের ফসল হারাবার ভয় যেন পিছুই ছাড়ছে না। অপরদিকে রয়েছে উপজেলার কির্তনখোলা ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন। দীর্ঘ ১৮ দিন ধরে কৃষক বাঁধ টিকিয়ে রাখা এবং কাঁচা ধান কাটায় ক্লান্ত। গত সপ্তাহ ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন শ্রমিক দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে আগাম পূর্বাভাসের কারণে হাওরে এরইমধ্যে ৭২ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে, জেলার কৃষি বিভাগ। তবে হাওরে কিছুটা কাঁচাধান কাটায় খরচের সঙ্গে উৎপাদনের হিসাব মেলাতে পারছেন না কৃষকরা আবার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বাজারে ধান বিক্রি করছেন চাষিরা।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বোরোতে বিঘাপ্রতি ন্যূনতম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ মণ পর্যন্ত ফলন হয়। এক বিঘায় খরচ পড়ে গড়ে বারো হাজার টাকা। এর মধ্যে বীজ ১২০০ টাকা, চাষ ৬০০ টাকা ও বপন ২০০০ টাকা, সার ও পানি ৬ হাজার ৫০০ টাকা, ধান কাটা ২ হাজার টাকা ও মাড়াই ১৫০০ টাকা। এর সঙ্গে জমি যদি পত্তন নিতে হয়, তারও খরচ আছে। নিজের শ্রমের মজুরিও রয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, এবার নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চলের ধান পাকতে বাকি ছিলো এক মাসের ওপরে। ধান পরিপক্ক হতে মাসখানেক বাকি থাকলেও নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়য়াজুরীর ধনু নদের পানি বেড়ে বাঁধগুলো পড়েছে হুমকিতে। ৫৫ কিলোমিটার খালিয়াজুরীর সবচেয়ে বড় বাঁধের সাত কিলোমিটার এলাকার কির্তনখোলা অংশে শুরুতেই দেখা দেয় ভাঙ্গন। ফসল বাঁচাতে শত শত কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে বাঁধ মেরামত করতে থাকে। কিন্তু ফাটল ঠেকাতে গিয়ে প্রতিদিন কাজ করলেও নতুন নতুন পয়েন্টে দেখা দেয় ধ্বস।
এভাবেই গত ১০ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। শেষ পর্যন্ত বাঁধের আশা ছেড়ে কাঁচা আধাপাকা ধান’ই কাটতে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। অন্যদিকে অব্যাহত ফাটল ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় প্রশাসনের সহযোতিায় শ্রমিক দিয়ে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে আজ বুধবার সকাল থেকে কাল বৈশাখি ঝড়ের প্রচন্ড বাতাসের সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুর পর্যন্ত ধনু নদের পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত।
তিনি আরো বলেন, বাঁধের ভেতরের ফসল মোটামোটি কাটা হয়ে গেছে। যেটুকু রয়েছে আশা করছি সেটুকু কাটতে পারবে কৃষক। তবে বাঁধ উপচে যে কোন সময় পানি ঢুকতে পারে বলেও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত, খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলামসহ পাউবো ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিক নিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে বাঁধ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে ধনু নদের তীরবর্তী খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের দিকে নদের পানি ধেয়ে যাচ্ছে। রসুলপুর জগন্নাথপুসহ নদের পশ্চিমপাড়ে এখনো মাঠে ৭০ ভাগ ধান রয়ে গেছে। যে কোন সময় তলিয়ে যাবার শঙ্কা থেকেই গেলো কৃষকের মাঝে। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ এফ মোবারক আলী জানান, হাওরে ধান ৩০ ভাগ কাটার বাকী আছে।