শিরোনাম
ত্রিশালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে মতবিনিময় সভা ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদে আমিন সরকারের বিজয় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সোহেল গ্রেফতার ময়মনসিংহে ২ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার জাককানইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফাহাদ, সম্পাদক আসলাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি আজ সন্ধ্যা ৭টায় সিইসির ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আফ্রিকার প্রাণী নীলগাই, জেব্রা ও কমনইল্যান্ড পরিবারে যুক্ত হলো পাঁচ নতুন ত্রিশালের সাখুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রিফাত ও সম্পাদক রিজন জয়পুরহাটের কালাইয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালিত

হাওরাঞ্চলে পানি কমলেও দুশ্চিন্তা কমছেনা কৃষকের, বাঁধ গুলো হুমকির মুখে

এম এ মান্নান, মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থে‌কে
  • আপডেট শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৪৩ দেখেছে

পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে অস্বাভাবিক ভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় হুমকির মুখে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ধর্মপাশায়, একাধিক হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ।

শুক্রবার থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করলেও দুশ্চিন্তা কমছেনা হাওর পাড়ের কৃষকদের। উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চন্দ্রসোনারতাল, সোনামোড়ল, জয়ধুনা, ধানকুনিয়া, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, রুইবিল গোরাডুবা কাইল্যানী হাওরের ফসল রক্ষা ও মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৫৭টি প্রকল্প (পিআইসি) গঠন করে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য ৩০কোটি ৩০লাখ ৪১হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু কৃষকের অভিয়োগ, বাঁধ মেরামত কাজে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও সীমাহীন দূর্নীতির কারনেই আগাম বন্যায় এভাবে চন্দ্র সোনারথাল বেরী বাঁধ প্রকল্পের অধীনে থাকা ডুবাইল নামক ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে চন্দ্রসোনারতাল হাওর সহ কয়েকটি হাওর তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে গত ২ এপ্রিল উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে পাশের তাহিরপুর উপজেলার নজরখালী ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে ধর্মপাশা উপজেলার সীমানায় থাকা টাঙ্গুয়ার হাওরের ২২০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

গত সোমবার রাতে পানির চাপ বেড়ে গিয়ে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সানবাড়ী বাজারসংলগ্ন সোমেশ্বরী নদীর পাড় উপচে পড়ে। এতে গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই নদীর দক্ষিণ পাশে থাকা কয়রানী হাওরে পানিতে ৩০ হেক্টর জমির আধা পাকা ধান তলিয়ে গেছে। একই দিন বিকেলে স্থানীয় কংস নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার ডোবাইল ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে ডোবাইল হাওরে ১৮৫ হেক্টর বোরো জমির আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হুমকিতে রয়েছে চন্দ্রসোনারতাল, সোনামোড়ল, জয়ধুনা, ধানকুনিয়া, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, রুইবিল গোরাডুবা কাইল্যানী হাওরের বেশ কিছু বাঁধ। উল্লেখিত বাঁধগুলোর কোনটি ডেবে গেছে, কোনটি ধসে গেছে আবার কোনটিতে বাঁধের নিচ দিয়ে চুয়ে চুয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করছে।

শুক্রবার উপজেলার গুরাডোবা হাওর ও গুরমা হাওরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ঘুরে দেখা যায়, কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে ফসল রক্ষায় বাঁধে মাটির কাজ করছেন। উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলেই দিন রাত বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শন করছেন। যেখানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।

উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই জানান, অসময়ে এতো পানি বৃদ্ধির কারণে পানির চাপে বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা কৃষকরা দিনরাত বাঁধ রক্ষার সেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছি।
বাঁধে কাজ করতে আসা কৃষকরা জানান, গতকাল থেকে নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নদীতে পানি বাড়লে বা বৃষ্টি হলে বাঁধগুলো আবারও হুমকির মুখে পড়বে।

কামাউরা গ্রামের কৃষকরা জানান, গোরাডুবা হাওরে ১৩৬. বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাঁধের নীচ দিয়ে পানি চুয়ে চুয়ে হাওরের ভেতর ঢুকছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বাঁধগুলো টিকিয়ে রাখতে আশংকাজনক খবর পেলেই স্থানীয় কৃষকদের সাথে নিয়ে বাঁধে ছুটে আসছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবীর। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলা উদ্দিন বলেন, এবার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তদারকিতেও যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। তাই এগুলো এখন হাওরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন বলেন, বাঁধের কাজ সঠিকভাবে করা হয়েছে। তদারকিও যথেষ্ট ছিল।

ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুনতাসির হাসান বলেন, নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারনে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো বাঁধ পানি বৃদ্ধির কারণে হুমকিতে রয়েছে।

বোরো ফসল রক্ষায় তিনি সার্বক্ষণিক বাঁধের খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও বাঁধে আছেন বলেও জানান। তিনি আরও জানান, কৃষকের বোরো ফসল রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের কারণে আমাদের হাওরের সব বাঁধই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসন সহ সবাইকে বাঁধ রক্ষায় তদারকি সহ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি। গ্রামের সাধারণ কৃষকরা স্বেচ্ছায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে কাজ করছেন। আমরা তাঁদের বাঁশ, বস্তা ও জিও ব্যাগ দিয়ে সহযোগিতা করছি। এই কয়েকটা দিন কোনো মতে আমরা কাটিয়ে উঠতে পারলে আশা করি হাওরের ফসল তুলতে সক্ষম হব।

উল্লেখ্য, চলতি বছর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে মধ্যনগর উপজেলার ৪ টি ধর্মপাশার ইউনিয়নের মোট ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংক্রান্ত আরও খবর

ফেইসবুক পেজ

error: Content is protected !!