কুড়িগ্রামে প্রতিযোগিতামূলকভাবে কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের অধিক ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্যের গুণগতমান হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের উপর। বাড়ছে উৎপাদন খরচও। জেলার কৃষকরা ফসল ও সবজিচাষের সময় ইচ্ছাকৃত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বেশি বেশি সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে অধিক ফলনের আশায়। এতে এই খাতেই কৃষকদের গুনতে হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। এতে করে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের উপর।
চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় বোরো আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। আলু আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে এবং ভুট্টা ১২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। কৃষকদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রতি হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে সার ও কীটনাশক ব্যবহারে খরচ পড়েছে ২১ হাজার টাকা করে। এতে মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৩ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আলুতে হেক্টরে ৫০ হাজার টাকা হিসেবে মোট ব্যয় হয়েছে ৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ভুট্টাতে হেক্টর প্রতি ২ হাজার টাকা ব্যয় করে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো, আলু, ভুট্টা, গম, সবজি, আমের মুকুলসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার সার ও কীটনাশক জমিতে ব্যবহৃত হবে।
জেলায় বছর বছর কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশ প্রান্তিক কৃষকরা। তারা খরচ পুষিয়ে নিতে অধিক ফলনের আশায় মনগড়াভাবে সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করছে। এতে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি। পরিবেশ বিপর্যয়সহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের উপর। মানুষ চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার করিমের খামার গ্রামের কৃষক মজিদুল জানান, ‘হামরা বেশি ফলনের আশায় বেশি বেশি করি সার ও কীটনাশক দেই।’ এই গ্রামের আরেক কৃষক কালাম জানান, ‘হামরাতো অতশত বুঝবের পাই না। মানুষ দেয় হামরাও বেশি করি দেই।’
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, কৃষকরা তাদের ইচ্ছেমতো সার-কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এ জন্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মাটির গুণগতমান কমে যাচ্ছে, পরিবেশ এবং মানবদেহের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তবে কৃষি বিভাগ অধিক সার-কীটনাশক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।