চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর গ্রামের সত মামার হামলায় আহত ভাগিনা আমেরিকা প্রবাসী মো. বেলাল (৪০) মারা গেছেন। নিহত বেলাল ওই গ্রামের মৃত নুর আহমদের ছেলে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সত মামা সদলবলে তাঁর ওপর এক সপ্তাহ আগে হামলা চালিয়েছিল।
শুক্রবার বেলালের মৃত্যু হলেও শনিবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ময়না তদন্ত শেষ না হওয়ায় দাফন করা সম্ভব হয়নি। আর থানা পুলিশও মামলা নেয়নি। উল্টো পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, নিহত প্রবাসী করোনা আক্রান্ত ছিলেন। ফলে প্রবাসী পরিবার নিরূপায় হয়ে পড়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, বেলাল পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকে দেখার জন্য আমেরিকা থেকে এক মাসের জন্য বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণে লকডাউন শুরু হলে তিনি আমেরিকা ফিরে যেতে পারেননি। এরই মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ দেখা দেয় এক সময়ের বিএনপি ক্যাডার ও একাধিক মামলার আসামি আবদুর রউফ ভুট্টো ও মহিউদ্দিনদের সঙ্গে। রউফ এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ফলে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করে আবদুর রউফ ভুট্টো ও মহিউদ্দিন সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে গত ৬ জুন সন্ধ্যায় বেলালের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
হামলার শিকার হওয়ার পর বেলাল থানায় একটি অভিযোগ দেন। কিন্তু পুলিশ এই বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়নি। আহত বেলালকে হত্যার হুমকি এবং পথিমধ্যে দ্বিতীয় দফা হামলা চালানোর হুমকি দেওয়ায় বেলালকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
মৃত্যুর পর পুনরায় পটিয়া থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আহত হওয়ার পর হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে কেন চিকিৎসা নিয়েছেন বেলাল। এমন অজুহাতে পটিয়া থানা পুলিশ হত্যা মামলা নেয়নি। পারিবারিক সূত্র দাবি করছে, ভুট্টো ও মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় প্রভাব বিস্তার করে কৌশলে হত্যা মামলা না নিতে পুলিশকে প্রভাবিত করছে। একই কারণে পুলিশ প্রথমে দাখিল করা অভিযোগের বিষয়েও তদন্ত করেনি। এখন হত্যা মামলাও নিচ্ছে না।
আহত বেলালকে ঘরে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে নিহতের বড় ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসীরা হুমকি দেওয়ার কারণে বেলালকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিতে পারিনি। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে সিট না পাওয়া অন্য হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে বেলালের মৃত্যু হয়। পরে আমি (সাইফুল) বাদী হয়ে পটিয়া থানায় একটি এজহার দায়ের করি। কিন্তু পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি।
হামলার বিষয়ে আব্দুর রউফ ভুট্টো কালের কণ্ঠকে বলেন, বেলাল আমার সত বোনের ছেলে। সে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমি রিপোর্ট সংগ্রহ করেছি।’ নমুনা ছাড়া আপনি রিপোর্ট কিভাবে পেলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যালের কাগজ পেয়েছি।
নিজকে বিএনপি দলীয় ক্যাডার নয় দাবি করে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে সহ একাধিক মামলা অতীতে ছিল। এসব মামলায় আমি খালাস পেয়েছি।
আমেরিকা প্রবাসীর মৃত্যুর পরও হত্যা মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, বেলালের লাশ ময়না তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র- কালের কণ্ঠ