নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। তাদের সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিকরাও। আগাম ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে আধা পাকা ধান কাটায় এমন ক্ষতিতে পড়েছেন চাষিরা। তার উপর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা কৃষক সহ শ্রমিকরাও।
এরইমধ্যে হাওড়ের প্রায় ৭০ ভাগ ধান কেটে ফেলেছেন কৃষকরা। কিন্তু ধানের ফলন হয়েছে অর্ধেক। তার ওপর চিটা হয়ে গেছে ধানে। এমন দুর্যোগের মাঝে ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছে না তারা। এ অবস্থায় শুধুমাত্র কৃষকরাই নয়, চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাওড়ে ধান কাটতে আসা শতশত শ্রমিক। কষ্ট অনুযায়ী কৃষকদের ফলন কম। আধা পাকা ধান কেটে ফেলায় এই অবস্থা হয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে থেকে ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা। তারা আরো বলেন, বাজারে ধানের মূল্য কম, ব্যাপক ভাবেই লোকসানে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষীরা। কোন ভাবেই উৎপাদন ব্যয় উঠেছে না তাদের কেউই। এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, চারা রোপনে খোঁজ নেয়নি কৃষি বিভাগও। কৃষক কৃষানীরা বলছেন, কৃষি বিভাগ তাদেরকে সময় থাকতে পরামর্শ দিলে সে অনুযায়ী বীজ রোপন করতে পারতেন তারা।
হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা কয়েক সপ্তাহের পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীর ধনু নদসহ বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে নদী তীরবর্তী কয়েকশত হেক্টর ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে ছোট বড় বেশ কটি ফসল রক্ষা বেরিবাঁধ। যদিও গত দুদিন ধরে ধনু নদের পানি কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে। তারপরও আজ (২৩ এপ্রিল) শনিবার দুপুর পর্যন্ত বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যে কারণে শেষ রক্ষার ভয় এখনো রয়েছে কৃষকের। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে ফসল ডুবির আশঙ্কায় ইতিমধ্যে আধা পাকা ধানই কেটেছেন হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ চাষী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ এফ এম মোবারক আলী জানান, হাওরের ধানের জাত পুরনো হয়ে যাওয়ায় ফলন কম হচ্ছে। তিনি বলেন, ২৮ ব্রি ও ২৯ ব্রি ধানের জাতের বদলে ৮৮ এবং ৮৯ জাতের ধান রোপনের পরামর্শ দেন কৃষক ভাইদের।
তিনি আরও বলেন, ২৮ ধানের বয়স হয়ে গেছে ২৬ বছর। যে কারণে ফলন এখন কম হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এগুলোর কমে গেছে। সেইসাথে প্রকৃতিকগতভাবেই ১০ থেকে ১৫ ভাগ ধানে চিটা হয়ে যাবে। কাজেই চিটা পাকিয়ে কাটলে এগুলো ঝড়ে যাবে। ২৮ ব্রি ধান চাষ করতে থাকলে দিন দিন ক্ষত্রিগস্থই হবেন কৃষকরা। তাই আগামীতে তিনি ওগুলোর বিকল্প ধান ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯ চাষ করার পরামর্শ দেন। তিনি আরও জানান, হাওরাঞ্চলের আবাদটা ত্রিমুখী বিপদের মধ্যে, বেশি আগাম লাগালে কোল্ড ইনজুরীতে আক্রান্ত হবে, দেরীতে হলে আগাম ঢলে তলিয়ে যাবে আবার সর্ট ডিওরেশনের হলে ফলন কম হবে। কাজেই ধনু নদের পাড়ে কির্তনখোলা বেড়িবাঁধ স্থায়ী করার বিকল্প নেই।