কাল বৈশাখী ঝড়ে মধ্যরাতে উপড়ে পড়া বিশালাকৃতির একটি ইউকেলিপটাস গাছ যে যার মত করে কেটে নিয়ে সাবাড় করেছে রেলওয়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা। প্রকাশ্যে দিনের বেলা এই হরিলুট হলেও কিছুই জানেননা বলে দায় এড়াচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আর রেলওয়ে ভূসম্পত্তি অফিসের (আইওডাব্লু) কর্মীরা শেষ মূহুর্তে উপস্থিত হয়ে গোড়াটি রক্ষা করলেও খোয়া যাওয়া অংশগুলো উদ্ধারে নির্বিকার। অথচ হাসপাতালের সার্ভিস কোয়াটারে বেশ কয়েকটি গাছের গুড়ি কর্মচারীদের আয়ত্বে এখনও বিদ্যমান।
ফলে অভিযোগ উঠেছে আইওডাব্লু’র সাথে যোগসাজশে রেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারী গাছটি তসরুপ করেছে। একারণে ওই গাছ খেকোরা উল্টো হম্বিতম্বি করছেন। এতে সরকার লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব হারিয়েছে এবং অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িতরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগের পেছনে এবং আন্তঃবিভাগ তথা মূল হাসপাতাল ভবনের সামনে কয়েকটি বিশালাকৃতির ইউকেলিপটাস গাছ রয়েছে। এগুলোরই একটি গাছ (গেট সংলগ্ন) রবিবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে তিনটার দিকে প্রবল বৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে শিকড়সহ উপড়ে যায়। এতে গেটের সাথের হাফ বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে গেছে।
সকালে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বসবাসকারী কর্মচারীরা প্রায় সকলে মিলে গাছটির সব ডালপালা ও মূলকান্ডের বৃহদাংশই কেটে যার যার মত করে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে বিষয়টি আইওডাব্লু কে জানালে তিনি বলেন, গাছ পড়া বা কাটার কোন তথ্য জানা নেই। তবে তিনি বেলা ৩ টার দিকে ওই অফিসের কর্মচারী মাসুমসহ দুইজনকে হাসপাতালে পাঠান। এসময় গাছ কাটায় জড়িতরা সবাই সটকে পড়ে।
এরপরেই সরেজমিনে গেলে দেখা যায় শুধু গাড়ের গোড়ার দিকের একটি কাটা অংশ পড়ে আছে। তাতেও প্রায় দুই স্থানে ভাগ করে কেটে নিতে দা বা কুড়াল দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। বিশালাকৃতির গাছের বাকী অংশগুলো গায়েব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় স্টাফ কোয়াটারের বাউন্ডারির ভিতরে গাছের কয়েকটি খন্ড আছে। এগিয়ে গেলে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। কিন্তু কেউ এগুলো কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করেননি। বরং রাতেই কে বা কারা গাছটি কেটে নিয়ে গেছে তা জানেন না বলে মন্তব্য করেন।
এসময় একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের ড্রেসিংম্যান বাদশা খান আইওডাব্লু অফিসের কাছ থেকে গাছটি নিলামে নিয়ে কেটেছেন। কিছু গুড়ি (টুকরা) সরিয়ে ফেলেছেন আর কিছু কোয়াটারের মধ্যে রেখেছেন।
নিলামে নেয়ার কথা অস্বীকারই শুধু নয় গাছের কোন অংশই কাটেননি বলে সাফ জানান হাসপাতালের ড্রেসিংম্যান বাদশা খান। তিনি বলেন, কে বা কারা গাছ কেটেছে তা আমার জানা নেই। কোয়াটারের ভেতরকার গাছের গুড়িগুলো কার জানতে চাইলে বলেন, ওই ব্যাপারে ডিএমও (বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার) স্যার জানেন।
সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালের ডিএমও ডা. মো. আনিছুল হক বলেন, আমি গাছটি দেখতেও যাইনি। সকালে আইওডাব্লু কে জানিয়েছি। এখন সম্পূর্ণ তাদের দায়িত্ব। এরপর যদি গাছটি কেউ নিয়েও যায় বা গরু ছাগলও খেয়ে ফেলে বা ভুতুড়ে ভাবে গায়েবও হয়ে যায়। তাহলে আমার কিছুই করনীয় নেই।
তিনি আরও বলেন, গাছ কেটে নিয়ে থাকলে তা রাতেই বাহিরের লোকজন এসে করেছে। কোয়াটারে কয়েক খন্ড গাছ আছে জানালে তিনি বলেন, সেই ব্যাপারে আইওডাব্লু বলতে পারবে। হয়তো তারাই ওগুলো সেখানে রেখেছে। আমার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন লাভ নেই।
আইওডাব্লু মো. শরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ঝড়ে গাছ পড়া বা কেটে উধাও করার কোন তথ্য আপনারা (সংবাদকর্মী) বলার আগে জানা ছিলনা। আমি জরুরী কাজে পার্বতিপুরে আছি। তবুও খবর পেয়েই লোক পাঠিয়েছি। তারা গোড়ার অংশটি রক্ষা করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, রাতেই হয়তো গাছটি কেটে সাবার করা হয়েছে। নিলামে বিক্রির কোন প্রশ্নই উঠেনা বলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং গাছটি মরা ছিল উল্লেখ করে অন্য অংশগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে অনিহা প্রকাশ করেন।
সূত্রের অভিযোগ, প্রায় লক্ষাধিক টাকা মূল্যের বিশাল গাছটি সব কর্তৃপক্ষ মিলে সাবাড় করেছে। ইতোপূর্বেও এভাবে গাছ কাটা হয়েছে।বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ায় সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের অধীনে থাকা গাছ কাটা, কোয়াটার ও বাংলো বেদখল হওয়া, সেগুলোর মূল্যবান লোহার রেল লাইন, দরজা জানালা, ইট ও অন্যান্য সম্পত্তি প্রতিনিয়ত তসরুপ হচ্ছে।