সৈয়দপুরে স্থানীয় শহীদ দিবস পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ‘৭১ এর স্মৃতিবহ এই দিনটি পালন করে প্রজন্ম ‘৭১ ও রক্তধারা ‘৭১।
সকালে শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের স্মৃতি অম্লান চত্বরে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরে সেখানেই স্মৃতি অম্লানের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এসব কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী সদস্য-২৩ ও নীলফামারী জেলা মহিলালীগ সভানেত্রী রাবেয়া আলিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রজন্ম ‘৭১ নীলফামারী জেলা সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ সন্তান মহসিনুল হক মহসিন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সৈয়দপুর উপজেলা সভাপতি মুজিবুল হক, অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, সাংবাদিক এম আর আলম ঝন্টু, মহিলা এমপিপুত্র ও আওয়ামীলীগ নেতা প্রকৌশলী রাশেদুজ্জামান, সাবেক কাউন্সিলর সরকার ইউনুস কবীর, সাবেক উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোস্তাকুর রহমান বসুনিয়া সহ সৈয়দপুরের শহীদদের সন্তানেরা।
এসময় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, শহীদ তুলশীরাম সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, শহীদ কুদরত স্মৃতি সংসদ, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ শহরের অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
সন্ধায় পৌরসভা সড়কের আদিবা কনভেনশন সেন্টারে প্রজন্ম ‘৭১ এর পক্ষ থেকে দিবসটি উপলক্ষে শহীদদের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে উল্লেখিত অতিথিরাসহ সৈয়দপুরের বিশিষ্টজনেরা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সৈয়দপুর শহর উর্দূভাষী (বিহারী) অধ্যুষিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ শহরকে ‘দ্বিতীয় বিহার’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সিংহভাগ উর্দূভাষী পাক হানাদার বাহিনীকে সমর্থন করে। সারাদেশে ২৫ শে মার্চ যুদ্ধ শুরু হলেও সৈয়দপুরে ২৩ শে মার্চেই যুদ্ধের ডামাডোল বেজে ওঠে।
আবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলেও এখানে যুদ্ধ চলে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধে সৈয়দপুরে প্রথম শহীদ হন মাহাতাব বেগ। তিনি ছিলেন পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান।
১২ এপ্রিল অবরুদ্ধ সৈয়দপুরবাসী বাঙ্গালীদের উদ্ধারে দলবল নিয়ে শহরে প্রবেশকালে হানাদার বাহিনী ও বিহারী রাজাকারদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। একসময় নিরস্ত্র লোকজন পাকসেনাদের আক্রমণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও মাহতাব বেগ বীরদর্পে এগিয়ে আসতে থাকেন।
একপর্যায়ে শহরের বাঁশবাড়ী এলাকায় তাঁকে আটকের পর হত্যা করে এবং দেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে তলোয়ারের আগায় গেথে শহরজুড়ে উল্লাস করে ঘাতকরা। পরে সাড়ে ৯ মাসে এই শহরে প্রায় সহস্রাধিক মানুষকে শহীদ করা হয়।
এর মধ্যে তৎকালীন এমএলএ শহীদ ডা. জিকরুল হক, শহীদ ডা. সামসুল হক, শহীদ ডা. জহুরল হক, শহীদ আমিনুল হক গোলোর মত বুদ্ধিজীবীসহ রেলওয়ে কারখানার বাঙালী কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছিলেন। যারা অধিকাংশই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।