১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ময়মনসিংহ কারাগারে রাজবন্দী জাতীয় নেতাদের স্মৃতির ধারক মোছা লূৎফুন নেছা আর নেই।
সোমবার(২৬ জুলাই) ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে (৭৬)বছর বয়সে তাঁর নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃতকালীণ সময় ৫ছেলে ও ৪ মেয়ে রেখে গেছেন। এই মরহুমা লূৎফুন নেছা ত্রিশাল আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ও ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছের মাতা।
ত্রিশাল আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার পেছনে এই লূৎফুন নেছা অনেক অবদান রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে মরহুমা লুৎফুন নেছার স্বামী বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন চেয়ারম্যান সুগার মিলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ত্রিশাল আওয়ামীলীগের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে চাকুরী থেকে সরে আসেন আবুল হোসেন চেয়ারম্যান। আর এই সরে আসার পেছনে সবটুকুই অনুপ্রেরণা ছিল তার স্ত্রী লুৎফুন নেছার।
তৎকালীন সময় চাকুরী ছেড়ে পরাধীন দেশে রাজনীতি করা ছিল অনেক দূঃসাহসিক কাজ। আর এই পথ বেঁছে নিয়েছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন চেয়ারম্যান শুরু করেন, ত্রিশাল আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার সূচনা। আর এর পেছনে সবটুকু সাহস অনুপ্রেরণা দিয়েছোন ছিল মেয়র আনিছের মাতা মরহুমা লূৎফুন নেছা। আজকের ত্রিশাল আওয়ামীগ জয় বাংলার মাটি ও ঘাটি ত্রিশাল এর প্রতিষ্ঠার পেছনে লূৎফুন নেছার বিরল অবদান রয়েছে। ১৯৭১সালে শুরু হয় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। আর এই স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরমুক্তিযুদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন চেয়ারম্যান ত্রিশাল থানা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতাদের নিয়ে আবুল হোসেন চেয়ারম্যান যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন আর এই প্রস্তুতিতে মরহুমা লূৎফুন নেছা তাঁর স্বামী মেয়র পিতাকে সবসময সাহস যোগিয়েছিলেন।
ছোট বাচ্চা নিয়ে লূৎফুন নেছা একটুও বিচলিত হননি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে দুর থেকে আসা দলীয় নেতা কর্মী ও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরও সবসময় সাহস যোগিয়েছিলেন এবং নিজে রান্না করে খাবার খাওয়াতেন।
এই লূৎফুন নেছা নেতা যদিও স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেননি তবে ঘরে থেকে স্বাধীনতা কামনা করা স্বামীসহ যুদ্ধে অংশগ্রহন কারীদের সব সময় সহযোগীতা করে মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে কোন অংশেই কম করেননি। দেশ স্বাধীন হলো, যোদ্ধবিধস্থ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত অনাহারী অসহায় মানুষদের সব সময় সহযোগীতা করেছেন এবং তাঁর পরিবারের সকলকেই সহযোগীতা করার অনুপ্রেরণা দিতেন। এলাকার অসহায় অনাহারী মানুষ গুলো বাসা ছুটে আসলে লূৎফুন নেছা নিজ হাতে তাদের সেবা দিতেন তাই ত্রিশালের অসহায় গরীব মানুষ গুলোর মাঝে মমতাময়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন মেয়র মাতা।
দেশ স্বাধীন হওয়া পর মানুষের সেবায় বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন চেয়াম্যানের পরিবারে ব্যস্ততম সময় গুলো কাটতো। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলো। সারাদেশে আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কিছু নেতা কর্মীকে দল থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। মুজিব আদর্শের প্রকৃত নেতাদের সরিয়ে নিতে কোন ভয়ভীতির চেষ্টা কাজে না আসায় অবশেষে হত্যা ও রাজবন্দী করা হয়। এই বন্দীর তালিকা থেকে বাদ পড়েনি ত্রিশালের মেয়র পিতা মরহুমা লূৎফুন নেছার স্বামী ত্রিশাল থানা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন চেয়ারম্যান।
তাকে বন্দী করে ময়মনসিংহের কারাগারে রাখা হয়। ঐ সময় ময়মনসিংহ কারাগারে রাজ বন্দী ছিলেন, মহামান্য রাস্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ সহ জেলা উপজেলার প্রথম শ্রেণীর নেতৃত্ববৃন্দ। ঐ ভয়াবহ দিনগুলোতে প্রতিদিন বাসা থেকে খাবার নিয়ে যেতেন মেয়র মাতা লৎফুন নেছা। জাতীয নেতাদের সাথে মেয়র পিতা কারাবাস করায় জাতীয় নেতাদের সথে মেয়র মাতার পরিচয় হয়। সেই পরিচয়ে জাতীয নেতাদের খাবার সহ তাদের কিছু কিছু পছন্দের খাবারো নিয়ে যেতেন। সেই রাজবন্দী নেতাদের মাঝে অনেকেই বেঁচে অাছেন আবার অনেকেই নেই। ঐ রাজবন্দী জাতীয নেতাদের কারাগারের স্মৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন মেয়র মাতা মরহুমা লূৎফুন নেছা। ২৬জুলাই ভোর ৫টায় সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মেয়র মাতা লূৎফুন নেছা। মহুত্যেই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে, তাঁর আত্মীয় স্বজন,, দলীয় নেতা কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা, কর্মচারী পরিষদ, সামাজিক সংগঠন গুলো শোকসম্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ও শোকবার্তা দিয়েছেন।
মৃত্যুকালীন সময় ৫ছেলে ও ৪মেয়ে রেখে গেছেন। মায়ের আদর্শ নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত সন্তানেতা ২৬জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় জানাযা শেষ করে পিতার কবরের পাশে দাফনের মধ্যদিয়ে শেষ বিদায জানান মাকে ।
সমাপ্তি ঘটে ৭৫রে রাজবন্দী জাতীয নেতাদের স্মৃতির ধারক।