সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করার দায়ে আল- আমিন সালমান (২৬) নামে কথিত এক সাংবাদিক এলাকাবাসীর হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের চামরদানী গ্রামের সামনের রাস্তায় এ ঘটনাটি ঘটে। গণধোলাইয়ের শিকার হওয়া কতিপয় সাংবাদিক আল-আমিন সালমান উপজেলার বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলীপুর গুচ্ছ গ্রামের রফিক মিয়ার ছেলে।
জানা গেছে, আল-আমিন সালমান দীর্ঘদিন যাবত দৈনিক ভোরের দর্পণ ও “সুনামগঞ্জের খবর” পত্রিকার মধ্যনগর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড় সীমান্তবর্তী এলাকার গরু কারবারি ও মাদককারবারি সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি এলাকার সাধারন লোকজনদেরকে নানা কৌশলে বেকায়দায় ফেলে তাদেরকে জিম্মি করে তিনি ওইসব লোকজনদের কাছ থেকে মাসে মাসে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকেন বলেও জানা গেছে, তার সাংবাদিক পেশাই আয়ের উৎস । এ অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার চামরদানী মড়লবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক কয়েল (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে মাদককারবারি বানিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করবে বলে ভয় দেখিয়ে কতিপয় সাংবাদিক আল-আমিন সালমান তার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এ নিয়ে তারা দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আজিজুল তার পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে ওই সাংবাদিকের হাতে দেন। এসময় তাকে ৫ হাজার টাকাই দিতে হবে বলে তিনি আজিজুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং তিনি তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় রিপোর্ট করবেন বলে তাকে আবারও হুমকি দেন। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে এসে ওই সাংবাদিকক গণধোলাই দেন। আর এ বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেইসবুকে ভাইরাল হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাংবাদিক আল-আমিন সালমানের মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজিজুল ধানের ব্যবসা করে। তার কাছে আমার এক মামা হাওলাত বাবত ৫ হাজার টাকা পান। আমি তার কাছে ওই টাকা চাইতে গেলে সে পরিকল্পিতভাবে আমার সাথে এ ঘটনাটি ঘটায়।
বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি চক্র আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা বদনাম ছড়াচ্ছে।
মধ্যনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এমএ মান্নান বলেন, সাংবাদিক আল- আমিন সালমান দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে বলে তার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসে। তিনি আরো বলেন, আল-আমিন সালমান ধর্মপাশা প্রেসক্লাবের সদস্য ছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এ ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকায় গত প্রায় বছর খানেক আগে ওই প্রেসক্লাব থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। তিনি বলেন, আল- আমিন সালমান আমাদের সাংবাদিক সমাজের কলংক। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সাংবাদিক সমাজকে এ কলংক থেকে মুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধর্মপাশা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. ইসহাক মিয়া বলেন, আল-আমিন সালমান নামে ওই ছেলেটা মূলত সাংবাদিকতা শেখার আগেই সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ার দায়ে তাকে আমাদের প্রেসক্লাব থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করেছিলাম।
এবিষয়ে মধ্যনগর থানার অফিসার ইনচার্য ( ওসি) মো. জাহিদুল হক বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনার খবর আমি শুনেছি। তবে এব্যাপারে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ এখনো আসেনি।