মতিন ও রাজিব দুই বন্ধু। দুজনের অনেক ভাব, কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারেনা, এক মুহূর্তের আড়াল হলেই তাদের প্রাণ কেঁদে উঠে। একে অপরের প্রতি এত বিশ্বাস আর ভালোবাসা থাকতে পারে তাদের দুজনকে না দেখলে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। সৌভাগ্যক্রমে তাদের দুজনের চাকরি হয় একই অফিসে। সেই সুবাধে তাদের বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীর হয়।
মতিনের পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল। রাজিবের পারিবারিক অবস্থা অসচ্ছল। মাস দুয়েক হল মতিন বিয়ে করেছে। রাজিবের আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল থাকায় তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। মতিন বন্ধুর মনের অবস্থা বুঝতে পারে। মতিন রাজিবের মা-বাবাকে বলে রাজিবের জন্য মেয়ে দেখতে, সে আরও বলে সে আর্থিকভাবেও সহায়তা করবে। মতিনের কথা শুনে রাজিবের বাবা-মা খুব খুশি হয়। কিছুদিনের মধ্যেই রাজিবের বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করে। মতিন রাজিবের বিয়েতে আর্থিক ও অন্যান্য সার্বিক সহযোগিতা করে। সংসার জীবনে দুই বন্ধুই খুবই সুখী। একবছর পর দুই বন্ধুর ঘর আলো করে দুটো ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হল।
রাজিবের আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল থাকায়, মতিন প্রায়ই রাজিবের বাড়িতে আসে, তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। রাজিব তার সাথে পরিবারের সব সমস্যার কথা শেয়ার করে, রাজিবের স্ত্রী জ্বোনাকীও মতিনের সাথে পরিবারের সমস্যার কথা শেয়ার করে। রাজিবের অবর্তমানে মতিন রাজিবের বাসায় আসে, জ্বোনাকীর সাথে সময় কাটায়। এভাবেই একসময় মতিন ও জ্বোনাকীর মধ্যে পরকীয়া প্রেম শুরু হয়। দিনে দিনে তাদের প্রেমের গভীরতা বাড়তেই থাকে।জ্বোনাকী দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়, কিন্তু তবু্ও রাজিবকে আর আগের মতো ভালোবাসেনা। তার সাথে সবসময় খারাপ আচরণ করে। রাজিব অনেক চেষ্টা করে বউকে খুশি রাখতে, পূর্বের মতো ভালোবাসার ঘর ফিরে পেতে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। রাজিবের দিন খুবই অশান্তিতে কাটছে। মতিন ও জ্বোনাকীর এখন একটাই স্বপ্ন তারা দুজনে বিয়ে করবে, সুখের সংসার করবে। কিন্তু তার আগে রাজিবকে ডিভোর্স দিতে হবে।
একদিন দুপুরে রাজিবের শরীর খারাপ লাগে, তাই অফিস থেকে বাসায় চলে আসে। মতিনকে তার বাসায় দেখেও রাজিবের মনে সন্দেহ হয়নি, কারণ সে তার বন্ধুকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে, তাই তার মাথায় অন্য কোন চিন্তা আসেনা। সেদিন রাতে জ্বোনাকী মতিনের সাথে ফোনে কথা বলছে।
মতিন : রাজিব কি আমাদের সন্দেহ করেছে।
জ্বোনাকী : না, সে তোমাকে অনেক বিশ্বাস করে।
মতিন : আর তুমি কি কর?
জ্বোনাকী : আমি তোমাকে ভালবাসি ও বিশ্বাস করি।
মতিন : সত্যি, কতটুকু ভালোবাস।
জ্বোনাকী : এতটুকু ভালোবাসি, যতটুকু ভালোবাসা রাজিবকেও বাসি না।
মতিন : আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
জ্বোনাকী : ঠিক আছে, রাখো কালকে দেখা হবে।
মতিন : ওকে জান।
রাজিব পিছন থেকে জ্বোনাকীর সব কথা শুনেছে, তার কাছে পৃথিবীটা অন্ধকার লাগছে। পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছেনা, তবু অনেক কষ্টে চেষ্টা করে রাজিব নিজেকে সামলে নেয়। জ্বোনাকীকে কিছু বুঝতে দেয়না। পরের দিনও রাজিব দুপুরেই বাসায় চলে আসে, সেদিনও মতিনকে বাসায় পায়। মতিন চলে গেলে, রাজিব সযত্নে জ্বোনাকীর হাতটি ধরে পাশে বসায়। তারপর তাকে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, আমার অর্থ কম কিন্তু আমিতো যাথাসম্ভব তোমার চাওয়া গুলি পূরণ করি। আর ভালোবাসায় সবসময়ই তোমায় আগলে রাখি। বল আমার কি কি কমতি আছে যা তুমি মতিনের কাছে পাও। বল, জীবন দিয়ে হলেও তোমার সব চাওয়া পূর্ণ করবো। প্লিজ তুমি আর এসব করো না। আমাদের সন্তান দুটোর দিকে তাকিয়ে সব বন্ধ কর, নিস্পাপ সন্তান দুটোর জীবন অন্ধকারে ঠেলে দিও না ।
জ্বোনাকী : তোমাকে আমি আর ভালোবাসি না।তোমাকে দেখলেই আমার বিরক্ত লাগে। তুমি আমাকে মুক্ত করে দাও।
রাজিব : আমাকে ভালো না বাস কিন্তু তোমার সন্তানদের তো ভালোবাস তাদের কথা ভেবে এসব পাপ বন্ধ কর।
জ্বোনাকী : যখন সব জেনেই গেছ তখন শুন, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব কয়েকদিনের মধ্যে। তারপর মতিনকে বিয়ে করবো। রাজিবের দুচোখ বেয়ে অবিরাম জল ঝরছে। সে জ্বোনাকীকে আর কিছু বলে না। মানুষের মন কখনো বেঁধে রাখা যায় না। কেউ মুক্ত হতে চাইলে তাকে মনের বিরুদ্ধে জোড় করে আটকিয়ে রাখা যায় না, রাখলেও তার ফল ভালো হয় না। রাজিব অভিমানে মতিন কে কিছু বলে না। মতিন জ্বোনাকীর কাছে সব শুনেও নির্লজ্জের মতো রাজিব ও জ্বোনাকীকে বোঝায় ডিভোর্স না দিতে। জ্বোনাকী জিদ করে অল্পদিনের মধ্যেই রাজিবকে ডিভোর্স দেয়। মতিন জ্বোনাকীকে গোপনে বিয়ে করে। মতিনের স্ত্রীও সেকথা জানেনা, সে মতিনকে অনেক বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে। কিন্তু মতিন স্ত্রীর বিশ্বাসে আঘাত করে, স্ত্রীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে গোপনে অন্যত্র ফ্ল্যাট ভাড়া করে জ্বোনাকীর সাথে সংসার করে। আর রাজিবের অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মতিন রাজিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। সন্তানদের বয়স কম হওয়ায় জ্বোনাকী সন্তানদের নিয়ে যায়। মতিন জ্বোনাকীর সন্তানদের সকল দায়িত্ব নেয়। মতিন রাজিবের সংসার ভাঙ্গে, তার মন ভাঙ্গে, তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে, বাবামায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে। তাদের স্বাভাবিক জীবনকে দুর্বিষহ করে দেয়।
– সমাপ্ত –
বিঃদ্রঃ বন্ধুকে যতই ভালোবাসেন, হোকনা অন্তরের বন্ধু। তবু নিজের স্ত্রীকে পর্দায় রাখুন, বন্ধুর সাথে স্ত্রীকে মিশতে দিবেন না। বন্ধুকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাসায় আনা বর্জন করুন। যাদের সামনে যাওয়া হারাম, তাদের থেকে স্ত্রীকে যথাসম্ভব পর্দায় রাখুন। আপনার স্ত্রী একান্তই আপনার, অন্যের সামনে নিজের স্ত্রীকে সাজিয়ে উপস্থাপন করে, অন্যের ভোগ্যপণ্য করবেন না। আপনার অসতর্কতা আপনার জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আপনার প্রাণপ্রিয় বন্ধু, আপনার অতি আপনজনই আপনাকে আঘাত করতে পারে, আপনার জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তাই সর্বদা সতর্ক থাকুন। পরকীয়া মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়, নিজের সুখের আশায় সন্তানের জীবন ধ্বংস করে দেয়, ফলে নিজেও অশান্তিতে থাকে, নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে অশান্তিতে রাখে।
সুতরাং
“পরকীয়া বর্জন করুন,
ইসলামের আলোয় জীবন গড়ুন ”
নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে, দেশকে, পৃথিবীকে যিনামুক্ত করুন।
ইহকাল ও পরকাল শান্তিময় করুন।
লেখক,
সাদিয়া সুলতানা