পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারনে নেত্রকোনার তিন উপজেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ। বন্যার কবলে পড়ে তারা এখন ছুটছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
তিন উপজেলার মধ্যে সীমন্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দার পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ উপজেলার আট ইউনিয়নে ৩৪৩ গ্রামের মধ্যে প্রায় সব গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্লাবিত হয়েছে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ উপজেলার বাসিন্দা প্রায় আড়াই লক্ষ, যার মধ্যে বন্যার কবলে পড়েছেন ৮৫ শতাংশ মানুষ। ফলে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষ।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয়সূত্রে জানাযায়, তিন উপজেলার মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। উপজেলার চানপুর, নদীপাড়, পশ্চিমবাজার, পূর্ববাজার, কলেজ রোডসহ অধিকাংশ এলাকায় হাঁটুপানি রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও পানি উঠেছে কোমর পর্যন্ত। বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ-মাদরসারার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি দপ্তরও প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তিন হাজারের বেশি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। দেখা দিয়েছে, গো-খাদ্যের চরম সংকট ।
বন্যার পরিস্থিতি অবনতির কারনে কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন শতাধিক বেশি মানুষ।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম জানান, ‘কলমাকান্দা উপজেলার আট ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার দুই লাখ ৪৫ হাজার মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাশংই এখন পানিবন্দি। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। পানি বেড়েই চলেছে, বন্যা কবলিত মানুষজন ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।’ তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ করা বিতরণ শুরু হয়েছে। আজ পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালিসহ ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ সকাল ৯টার দিকে উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলার মধ্যে কলমাকান্দায় বেশি বন্যা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। তিন উপজেলায় অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কংশ নদে বাঁধের একটি অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হচ্ছে। বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এপর্যন্ত বন্যাদূর্গত মানুষদের জন্য ১৮৮ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাতে প্রায় ১৬১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্হা করা হয়েছে।পরবর্তীতে রান্না করা খাবার পরিবেশ করা হবে।
এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য ৬৮ মেঃ টন চাল, ২৫০০০০ টাকা ও ২০০০ প্যাকেট শুকনা খাবার উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যা পরিস্হিতি পর্যালোচনার জন্য জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হল।