মালয়েশিয়ার রাজনীতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বিশ্বাস করেন এখনও রাজনীতিতে ফেরার জন্য ষড়যন্ত্র করছেন ‘১এমডিবি’ দুর্নীতিতে জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন কে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি এমপিদের এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক মিত্র আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তার উত্তরসুরি মুহিদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে পাল্টা ক্যু শুরু করতে। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মধ্যকার কথোপকথনে দেশটির সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে। রাজনীতির খেলা সম্প্রতি জমজমাট আকার ধারণ করেছে আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের মধ্যে। সেটাকেও বড় করে দেখেন না ৯৪ বছর বয়সী রাজনীতিক মাহাথির। তিনি মনে করেন প্রকৃত সঙ্কট এখনও নাজিব রাজাক, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যিনি ধরাশায়ী হয়েছেন।
এসব নিয়ে ‘দিস উইক ইন এশিয়া’তে বিস্তারিত এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন মাহাথির। এতে দু’দুবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিনকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের দুর্বল অনুগামী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মাহাথির বলেন, নাজিব রাজাক ১এমডিবি আর্থিক কেলেংকারিসহ কয়েক ডজন দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি। তাকে জেল থেকে বাঁচাতে মুহিদ্দিন সবকিছুই করবেন বলে মনে করেন মাহাথির। তিনি পাল্টা রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের যে আহ্বান জানিয়েছেন তা সফল হবে কিনা সে বিষয়ে মাহাথির বলেছেন, আনোয়ার ইব্রাহিম ও তার সঙ্গে যারা আছেন তাদেরকে একত্রিত হতে হবে। তার ভাষায় ‘ঐক্যবদ্ধ না হলে সরকার হঠাতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তা আমরা পাবো না। বর্তমান সরকারের রয়েছে ভঙ্গুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুম-এর মাধ্যমে নেয়া ওই সাক্ষাতকারে অনেক কথা বলেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেছেন, সাবেক এই নেতা নাজিকের দীর্ঘমেয়াদী জেল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে বিস্তারিত যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জন্য পাকাতান হারাপান ক্ষমতা হারিয়েছে তা ছিল নাজিবের জন্য একটি ইন্স্যুরেন্স পলিসির মতো। তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলার প্রথমটির রায় দেয়ার কথা রয়েছে আগামী ২৮ জুলাই।
মাহাথির বলেন, একটি বিষয় খুব স্পষ্ট। তা হলো, নাজিবকে যদি জেলে যেতে হয়, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুহিদ্দিনের জন্য কঠোর কোনো কাজ করবেন না। তিনি এই ব্যক্তিকে তখন আর প্রধানমন্ত্রী রাখবেন না। কিন্তু তিনি জেলে যেতে চান না। তিনি যদি জেলের বাইরে থাকতে চান তাহলে তার এমন একজন প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে, যার ওপর তিনি প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। নাজিব যদি আইনী সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন তাহলে হয়তো রাজনীতিতে ফেরার আশা করছেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হতে চাইছেন।
নাজিব রাজাকের সৎছেলে রিজা আজিজ এবং সাবেক মিত্র মুসা আমানকে দুর্নীতির মামলা থেকে সম্প্রতি মুক্তি দিয়েছেন প্রসিকিউটররা। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাহাথির। রিজা আজিকের মামলাটি ১এমডিবি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। সাবাহ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুসা আমান। সাক্ষীদের অভাবে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষী আছেন তারা হয়তো মারা গেছেন না হয় মালয়েশিয়া থেকে চলে গেছেন। তার এই বেকসুর খালাসের এফিডেভিট সমর্থন করেছেন সাবেক একজন এটর্নি জেনারেল। মুহিদ্দিন প্রশাসন ও তার এটর্নি জেনারেল ইদ্রুস হারুন উল্লেখ করেছেন যে, এই মুক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো বিবেচনা কাজ করে নি। এমন অবস্থায় নাজিব রাজাক যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সে সময় যারা অপরাধ করেছেন, এমন আরো অনেক মানুষকে মুক্তি দেয়া হতে পারে। মাহাথির বলেন, তারা যেকোনো কারণে বেরিয়ে আসতে পারে। নাজিবের মামলার ক্ষেত্রে তারা বলবে, তিনি জো লো’র দুর্নীতির শিকারে পরিণত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য, জো লো হলেন মালয়েশিয়ার একজন পলাতক ব্যবসায়ী। তিনি ১এমডিবি রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ চুরির সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় চরিত্র। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় ফিরতে।
রাজনৈতিক অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নিয়ে মাহাথির বলেন, একটি আশার জায়গা হলো পেরিকাতান ন্যাশনালের ভিতর অসন্তোষ। কারণ, রাজনৈতিক সুযোগ অনুগামীদের সন্তুষ্ট করতে পারে। এই জোটের সব সদস্যই এমন সুযোগ পান নি। তাই সরকারের শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ নিয়ে বেশ অসন্তোষের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসানো হয়েছে মুহিদ্দিন চক্রের লোকজনকে। ফলে সরকারে তাদের সমর্থন হারাচ্ছে। তাই আমরা এমন একটি অবস্থানে রয়েছি, যাতে আমরা সরকারকে উৎখাত করতে পারবো এমনটা দাবি করতে পারি। এ জন্য আমরা কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করেন নি মাহাথির। তবে তিনি বলেন, উত্তম পন্থা হলো পার্লামেন্টে পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া। এমন আহ্বান তিনি মে মাসের অধিবেশনে জানিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর প্রথমবার ওই মাসে পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে। কিন্তু এই অধিবেশনে মাহাথির ও আনোয়ার ইব্রাহিমের ওই প্রচেষ্টাকে আটকে দেন মুহিদ্দিন। মুহিদ্দিন সরকার করোনা ভাইরাসের দোহাই দিয়ে পার্লামেন্ট অধিবেশন দীর্ঘায়িত করা অনিরাপদ বলে দাবি করে একদিনেই মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই রাজা সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহর বক্তব্যের ওপর অধিবেশন শেষ করে।
সূত্র- বিডি২৪লাইভ