নেত্রকোনার বিভিন্ন নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো সময় ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলহানির আশঙ্কায় রয়েছেন হাওর অঞ্চলের কৃষক। এজন্য হাওরাঞ্চলের কৃষকরা দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে নেত্রকোণা জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানির বেড়ে বাঁধ ভেংগে ফসল হানির আশংকা করছে কৃষকরা।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার প্রধান প্রধান নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আজ (১৭ এপ্রিল) রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলের যাতে কোনো ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি না হয়, সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সতর্ক অবস্থায় বিভিন্ন বাঁধে অবস্থান করছেন।
খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে শুরু করায় হাওর উপজেলা খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে পুরোদমে ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানান, এ বছর নেত্রকোনা জেলায় এক লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩ মেট্রিকটন। খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ—এ তিন হাওর উপজেলায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কায় সরকার ৮০ ভাগ ধান পাকলেই হাওরের কৃষকদের ধান কাটার নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্য জেলা কৃষি বিভাগও কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তিন হাওর উপজেলায় ৪৪ হাজার হেক্টর বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৫৪ ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলায় ৩শত ৩২ টি হারভেস্টার ও ১০ হাজার শ্রমিক দিনরাত ধান কাটার কাজে নিয়োজিত আছে। আজ রোববার পর্যন্ত হাওরের প্রায় ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।
খালিয়াজুরী সদরের কৃষক হারছ মিয়া বলেন, “আমাদের এলাকায় বিআর-২৮ ধান কাটা শেষ হয়েগেছে, এখন হাইব্রিড ধান কাটা চলছে, যা কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গতকাল পর্যন্ত হাওর এলাকার ধনু নদীর পানি বিপদ সীমার ০৩ সেঃ মিঃ নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাবাসীকে নিয়ে এখনো বিভিন্ন বাঁধে অবস্থান করছে।