কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর-কলমাকান্দা-বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জসহ হাওর অঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। গবাদি পশুসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দূর্ভোগে দিন কাটছে বানভাসি মানুষদের।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বর্ষণ ও আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোনার দূর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বর্ষণে বাড়ছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর পানি।
ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অসংখ্য পুকুর পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ। বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে কলমাকান্দা উপজেলা সদরসহ বড়খাপন, পোগলা, খারনৈ, লেঙ্গুরা ও রংছাতি ইউনিয়ন, দূর্গাপুর উপজেলা সদরসহ কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও চন্ডীগড় ইউনিয়ন।
বিভিন্ন গ্রামের সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় দুই উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথের অতিথপুর এলাকায় বন্যার পানির তোড়ে একটি সেতু ভেঙে গেছে। ফলে এ পথে রেল-যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। সেতু ভেঙে পড়ায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আটকা পড়েছে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন এবং বারহাট্টায় মোহনগঞ্জগামী একটি লোকাল ট্রেন।
নেত্রকোনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রফিউল্লা বলেছেন, সেতুর মেরামত করা হচ্ছে। তারপরই আটকে থাকা রেলসহ যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বন্যা দুর্গতদের জন্য দুই উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, দুপুর পর্যন্ত সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার উপরে হলেও কংস নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন, কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে শুকনো খাবারসহ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।