ইজারা নেওয়া জলাশয়ে পানি প্রবেশ করাতে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দিয়েছেন, নেত্রকোনার খালিয়াজুরিতে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান। কেটে দেওয়া অংশে পানির চাপে প্রায় ২৫ ফুট এলাকাজুড়ে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে। এতে কয়েক’শ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
(২৫ এপ্রিল) সোমবার রাত ১০টার দিকে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর ইউনিয়নে পেতনা বাঁধে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বাঁধটি মেরামতে কাজ করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সদস্য এবং স্থানীয় কৃষকরা।
আজ (২৬ এপ্রিল) মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানসহ উপজেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তদারকিতে স্থানীয় লোকজনসহ কৃষকেরা বাঁধ টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম চালাচ্ছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন, খালিয়াজুরি উপজেলাধীন ১নং মেন্দিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. লোকমান হেকিম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার বিবরণীতে বলেন, লোকমান হেকিম ও মেন্দিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল কবির দীর্ঘদিন ধরে একটি মৎস্য সমিতির নামে নন্দের পেটনা জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন।
গতকাল রাতে লোকমান হেকিম লোকজন নিয়ে জলমহালে পানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাশের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসান। কিন্তু বাঁধে পানির প্রচুর চাপ থাকায় সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে নন্দের পেটনা হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে লোকমানকে ধাওয়া করেন। এ সময় লোকমান তাঁর মোটরসাইকেল রেখে দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা মোটরসাইকেলটি পানিতে ফেলে দেন।
বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে পাউবো ও প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে তাঁরা বাঁশ, চাটাই, বস্তা ইত্যাদি ফেলে বাঁধ রক্ষায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁধ কেটে দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত। তিনি বলেন, এটি খালিয়াজুরী হাওর অঞ্চলের পেতনার বাঁধ। মরা ধনু নদের পাশের বাঁধ এটি। বাঁধটি গত বছরের পুরনো। এটি ভাঙার কোনো কারণ ছিল না। জলাশয়ে পানি প্রবেশের জন্য ভেঙে ফেলেছে। বাঁধ মেরামতে আমাদের কর্মচারী ও শ্রমিকদেরকে কাজে লাগিয়েছি।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল বলেন, টানা ২৫ দিন ধরে আমরা রাতদিন বাঁধে অবস্থান করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ কীর্তনখোলাকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। জেলায় কোনো হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাঁধ ভেঙে ফসলহানি হয়নি। কিন্তু গতকাল রাতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নন্দের পেটনার বাঁধ কেটে দেওয়ার কারণে এখন হাওরে পানি ঢুকছে। ভাঙন ঠেকাতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ঘটনায় পাউবোর পক্ষ থেকে উপসহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুল খান বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, লোকমান হেকিম তাঁর লোকজন নিয়ে বাঁধ কেটে দিয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ জানিয়েছেন। যে বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে, সেটা খুবই শক্ত বাঁধ ছিল। ধনু নদের পানি এখন বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গত কয়েক দিন আগে নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। তখনো বাঁধ থেকে পানি প্রায় তিন ফুট নিচে ছিল। বাঁধটি টিকাতে না পারলে অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।