কোন নিয়ন্ত্রণ নেই বাজারের। সবকিছুই যেন সিন্ডিকেটে ভরা। বাজারে প্রচুর সবজির আমদানি । কিন্তু সব কিছুর দাম আকাশ ছোয়া। এর কোন কারনও জানা নেই জনসাধারণের। এখানেই উৎপাদন হওয়ার পরও বাড়তি দাম। অথচ যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করছেন তিনি পাচ্ছেন না বাজার সমতুল্য মূল্য। কোন রকম কৃষকের কাছ থেকে হাত বদল হলেই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে পড়ে। শহর গ্রাম সব জায়গায় একই অবস্থা। আবার বাড়তি দামের জন্য ইজারাদার দেরও দায়ী করেন অনেকে। কারন দিনের দিন খাজনার পরিমান কয়েকগুণ করে বাড়ছে।
রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার ঐতিহ্য বাহী কালিগন্জ হাট বসে প্রতি শুক্রবার ও মঙ্গলবারে। সেই হাটের এক অন্যতম ঐতিহ্য শপ পাটি বা চটিতে বসে ভাজা গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাই হাটে আসা মানুষ গুলো।আবার অনেকে দূরদূরান্ত থেকে আসেন ভাত খেতে। তবে রমজান মাসের জন্য তেমন হয়না ব্যবসা।কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম উঠানামা করে। ভিন্ন রুপ এবারে, চাল,ডাল,তেল, পিয়াজ সবকিছুর দাম আকাশ ছোয়া। সেই সাথে বেড়েছে খাজনার পরিমান। আগে যেখানে ১০ টাকা দিত হত। বর্তমানে দেওয়া লাগছে ৩০ টাকা করে।সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের আয় কমেছে অর্ধেক।আগে যে পরিমান ব্যবসা হত এখন তার অর্ধেকও হয় না।তাহলে আমরা চলব কিভাবে। শুক্রবার ও মঙ্গলবারে পৌর সদর গোল্লাপাড়ায় হাট বসে। হাটে আসা মোস্তফা নামের এক দিন মজুর জানান, হাটে আগুন ধরেছে সব পণ্যে। করলা ৬০ টাকা কেজি,পটল ৭০ টাকা কেজি,আলু ২৫ টাকা কেজি,পিয়াজ প্রকার ভেদে ২৫/৩০/২০ টাকা কেজি, তেল ১৭০ টাকা লিটার, কাচা মরিচ ১০০ টাকা কেজি,আদা ১২০ টাকা কেজি, শুকনা মরিচ ৪০০ টাকা কেজি, যে কোন ধরনের মাছ নিম্মে ২০০ টাকা থেকে ৬০০/৭০০ টাকা কেজি।অবশ্য পিয়াজের দাম কমেছে অর্ধেক। গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি,বয়লার ১৬০ টাকা, সোনালী ২৮০ টাকা, দেশি মুরগী ৪৫০ টাকা কেজি। ডলার নামের আরেক ব্যক্তি জানান হাটে যাওয়া মানেই ১ হাজার টাকা নাই। আমাদের আয় বাড়েনি। ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। ওহাব, জাইদুর নামের ভ্যান চালক জানান, আগে যা কিনতাম এখন অর্ধেক কিনতে পারছি। দ্বিগুন দাম বাড়লেও আমাদের ভাড়া তো বাড়েনি। বেঁচে থাকায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
পৌর সদর শীতলি পাড়ার ভূমিহীন মৎসজীবি বিশু, আজিমুলসহ অনেকে জানান, বিলকুমারি বিলের মাছ মেরে চলে সংসার।কিন্তু এবার বিলে তেমন মাছ নেই। একদিন কোন রকম মাছ পেলে পরেরদিন আর মিলেনা। সংসার চলে সবকিছু কিনে।বাজারে প্রতিটি পণ্যে আগুন ধরেছে। দাম এত বাড়তি কল্পনা তীত।চাল কিনলে তেল জুটেনা, তেল জুটলে সবজি জুটেনা। যেন সবকিছুতেই মহা সিন্ডিকেট আর কারসাজিতে ভরা।কিভাবে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছি না। মহা দূর্যোগের মধ্যে দিন পার হচ্ছে।
বেশকিছু খুচরা সবজি বিক্রেতারা বলেন,আমরা বাড়তি দামে কিনছি, এজন্য দাম বেশি।আমরাতো লোকসানে বিক্রি করতে পারব না। চালের কোন ঘাটতি না থাকলেও কেন বাড়ছে দাম, কে নিয়ন্ত্রণ করছে এসব, নাকি বড় ব্যবসায়িরা যা করবেন সেটাই চলবে।তাহলে কর্তাবাবুরা করছেন কি, কিংবা বলতে বাজার তুমি কার।এমন নানা প্রশ্ন সবার মাঝে।
কৃষকরা জানান, আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবকিছু উৎপাদন করছি।কিন্তু আমাদের জমি থেকে যে দামে সবজি কেনা হয়। বাজারে গেলে সে দাম তো থাকেই না। উল্টো আমাদের কেও বাড়তি দামে কিনতে হয়। সবকিছুর নিয়ম পরিবর্তন হলেও আদিকালের নিয়মেই পড়ে থাকতে হচ্ছে আমাদের। কেনই বা এঅবস্হার কোন পরিবর্তন নাই।আর কতকাল চলবে এমন সনাতন নিয়মরীতি। সবার ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও প্রান্তিক পা ফাটা চাষীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়না বলেও ক্ষোভ।
অপর দিকে সমাজের নিম্ম মধ্যবিত্ত কিছু পরিবার থাকে যারা কোথাও সাহায্য চেতে যেতেও পারেন না, কিছু বলতেও চান না।তাদের দূঃখ্যের সাথী বোবা কান্না। এমন কিছু পরিবার এই প্রতিবেদককে জানান, হাজারো কষ্ট হলেও কাউকে বলা যায় না। ছেলে মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকায় দূর্দশা। কোনদিন বাজার করা হয়, আবার কোনদিন পান্তা খিচুড়ি খেয়ে চল।
পবিত্র রমজান মাস এলে ব্যবসায়ীরা অধিক মোনাফা আদায় করতে চান।অথচ অন্য দেশে রমজান মাসে কম দামে বিক্রি করা যায় সেই চিন্তা থাকে।কিন্তু এদেশেই ভিন্ন চিত্র। যুগযুগ ধরে এমন সনাতন নিয়ম চলে আসলেও কোন পরিবর্তন নাই।
ব্যবসায়ী বাদল জানান যে সব পণ্য দেশে উৎপাদন হচ্ছে সে সবের দাম নেই।আর যে সব আমদানি করা লাগছে তার কোন নিয়ন্ত্রণ নাই।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সবজির দাম তো সরকার নির্ধারণ করেনা।অন্য কোন পণ্য মুল্যের চেয়ে বেশি দাম নিলে ব্যবস্হা নেওয়া হবে।