টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের ঘাস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে তিন শতাধিক পরিবার।
টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গোপালপুরের নলীন ও কালিহাতী উপজেলার গড়িলাবাড়ী ঘাটে ঘাস বিকিকিনির হাট বসেছে প্রতিদিনই। চলতি মৌসুমে যমুনায় পানি বেড়ে চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় গবাদী পশুর খাদ্যের যোগান দিতে ওইসব এলাকার মানুষ ঘাস বিক্রিকে সাময়িক পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ও অর্জুনার বৃহদাংশ, গোপালপুরের হেমনগর ও ঝাওয়াইল ইউপির কয়েকটি গ্রাম এবং কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড যমুনা নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে। ওইসব গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষের মূল পেশা মাছ ধরা (জেলে) ও কৃষিকাজ। তবে অসময়ে যমুনায় পানি বেড়ে নিচু এলাকার জমি ও বাড়ির আঙিনা তলিয়ে যাওয়ায় এলাকায় গো-খাদ্যের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। গো-খাদ্য সঙ্কটের কারণেই মূলত ঘাস বেচাকেনা এখন পেশায় রূপান্তর হয়েছে।
কয়েকটি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন জাতের ঘাস উৎপাদন ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ৩০০ পরিবার। তারা ভোর থেকেই ঘাসের আটি নিয়ে নদী তীরবর্তী নলীন বাজার, গোবিন্দাসী ঘাটপাড় ও গড়িলাবাড়ী পাথরঘাটায় অবস্থান করেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওইসব ঘাটে ঘাস বিকিকিনি হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে গো-খাদ্যের ক্রেতারা ঘাস কিনতে এসব এলাকায় আসেন।
গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে পরিচিত ঘাসের মধ্যে নেপিয়ার, দুর্বাঘাস, গর্বাঘাস, কাঠাঁলপাতাসহ আরও অনেক রকমের ঘাস বিক্রি হয়। যমুনার তীরঘেষা ওই বাজারগুলো এক সময় টাটকা মাছের বাজার হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে তা ‘ঘাসের বাজার’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
জানা গেছে, বাজারে এক আটি কাঠাঁল পাতা ২০-৩০ টাকা, দুর্বাঘাস প্রতি আটি ৭০-৮০ টাকা, গর্বাঘাস ৭০-৮০ টাকা, নেপিয়ার ঘাস প্রকার ভেদে ৩০-৮০ টাকা আটি দরে বিক্রি হচ্ছে।
নলীন বাজারে ঘাস বিক্রি করতে আসা চর বিহারী গ্রামের মো. ছানোয়ার হোসেন, ফজলুল ইসলাম, মো. ফরিদ মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে ঘাস বিক্রি করেই তাদের সংসার চলছে। এ মৌসুমে চরাঞ্চলে সাধারণত কাজ থাকেনা- তাই এ মৌসুমে ঘাস বিক্রি করে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা তারা রোজগার করতে পারেন।
গোবিন্দাসী বাজারের ঘাস বিক্রেতা আব্দুল গফুর, মোতালেব, সমীর, রায়হান জানান, তারা গরিব মানুষ। বর্ষা এলে কাজ না থাকায় ঘাস আর মাছ বিক্রির টাকায় তাদের সংসার চলে। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখাও চলে ঘাস বিক্রির টাকায়। সকাল সকাল ঘাস নিয়ে বাজারে এলে এবং বিক্রি হওয়া ঘাস পৌঁছে দিয়ে ও নৌকার খরচ বাদে গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা উপার্জন করা যায়।
ঘাস পরিবহনে নিয়োজিত ভ্যানচালক লোকমান হোসেন জানান, যমুনার মধ্যভাগে জেগে ওঠা নতুন চরে এমনিতেই অনেক প্রকার ঘাস জন্মে থাকে। তাছাড়া চরাঞ্চলে ঘাস চাষও ভালো হয়। যমুনা তীরবর্তী এলাকায় সাধারণত গো-খাদ্যের সঙ্কট থাকেই। এ কারণে ঘাটে ঘাটে ঘাস কেনা-বেচার বাজার গড়ে উঠেছে।
নলীন বাজারে ঘাস ক্রেতা নাজমুল, শাহজাহান, আরিফ আকন্দ সহ অনেকেই জানান, তাদের ৪-৭টি গবাদীপশু রয়েছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে গো-খাদ্যের সঙ্কট বেশি থাকে। অন্য সময়ও চরাঞ্চলের ঘাসই তাদের মূল ভরসা। তারা নলীন বাজার থেকে নিয়মিত ঘাস কেনেন।
নদী তীরঘেষা গোপালপুরের হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন খান আইয়ুব এবং ভূঞাপুরের ফলদা ইউপির চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান তালুকদার দুদু জানান, চরাঞ্চলের মানুষের জীবনধারণ আসলে খুব কষ্টের। নদী তীরবর্তী এলাকার গো-খাদ্যের যোগান দিতেই মূলত ঘাসের বাজারগুলো গড়ে উঠেছে। এসব বাজারকে কেন্দ্র করে চরাঞ্চলের তিন শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। প্রতিদিন চর থেকে ঘাস কেটে আটি বেধে তারা ঘাসের বাজারে এনে বিক্রি করছেন।