কোন্দল বিহীন রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক ৯ জেলার ৬টিতে সম্মেলন সম্পন্নঃ উপজেলা সম্মেলন হয়েছে শতকরা ৯০ ভাগ।
সারাদেশে দল গোছাতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ও কোন্দলে দুর্বল হয়ে পড়ছে সংগঠন। অনেক জেলায় দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একাধিকবার তাগাদা সত্ত্বেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হলেও এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রংপুর বিভাগ। যেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বললেই চলে। দূর্যোগপূর্ণ করোনাকালেও উপজেলা ও থানা সম্মেলন হয়েছে প্রায় ৯০ ভাগ। ৯টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬টির সম্মেলন হয়ে গেছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বাকি ৩টির সম্মেলন শেষ হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
উত্তরবঙ্গে আওয়ামী লীগের দুর্গ রংপুর বিভাগে মোট ৯টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিট আছে। সেগুলো হলো- রংপুর জেলা ও মহানগর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা। উপজেলা ও থানা ইউনিট ৬৬টি। রংপুর মহানগরীতেও চারটি থানা রয়েছে। বিগত জাতীয় সম্মেলনের পূর্বে ৬টি জেলা রংপুর জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সরাসরি সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলনের বাকি আছে ৩টি- গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর। ২০১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি পঞ্চগড়, ১২ মার্চ গাইবান্ধা, আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় নীলফামারীর জলঢাকায় ২০০৪ সালে। এছাড়া ইতোমধ্যে ১৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা এবং ২০ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক জানান, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। ৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন- মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর শিগগিরই সম্মেলনের জন্যে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানো, সমন্বয় সাধন এসব নিয়ে কাজ করছি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা করে ফেলব। নির্বাচনের আগে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন, নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝিগুলো অবসানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিরোধপূর্ণ জেলা-উপজেলার নেতাদের নিয়ে আমরা (বিভাগীয় টিম) বসব এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। পরবর্তী সময় হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
সারাদেশের তুলনায় রংপুর বিভাগে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুলনামূলক নাই বললেই চলে। জানা গেছে, পুরো বিভাগে দিনাজপুর একটু কোন্দলপ্রবণ এলাকা। এজন্য সম্মেলন হচ্ছে না। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রভাবশালী দুজন সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দ্বন্ধ বেশ পুরনো। শুধু দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচি পালিত হয়ে থাকে। তবে শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে অন্য ইউনিটগুলো।
এ ব্যাপারে সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, রংপুরের তৃণমূলে কোন্দল নেই বললেই চলে। সামনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন। দুটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা কাজ শুরু করেছি। নির্বাচনে অনেকেই নৌকার প্রার্থী হতে চান। দলীয় মনোনয়ন চান। আগের বার দলীয়প্রধানের নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় তাদের একটা সুযোগ দেয়া হয়েছিল। জনপ্রিয়তা, এলাকায় অবস্থান প্রভৃতি কারণে তাদের মৌখিকভাবে ক্ষমা করা হয়েছিল। গত কার্যনির্বাহী বৈঠকে বিদ্রোহীদের নিয়ে কথা হয়েছে। এবার যারা দলীয় প্রতীকের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন তাদের আর ক্ষমা করা হবে না। এমন কঠোর মনোভাব সারাদেশের দলীয় কোন্দল কমাতে সহায়তা করবে এবং দলীয় শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। তিনি বলেন, বিদ্রোহীদের ঠাঁই নেই।
অনুপ্রবেশকারীদের ঠাঁই নেই। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন হওয়ার কারণে অনেকেই পরিচয় গোপন করে দলে আশ্রয় নেন। যাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ বজায় রাখতে এবং কোন্দল নিরসনে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।