সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ভালুকায় নাগরিক অসন্তোষের অবসান ঘটিয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছেন ইউএনও ত্রিশালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে মতবিনিময় সভা ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদে আমিন সরকারের বিজয় চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সোহেল গ্রেফতার ময়মনসিংহে ২ কেজি গাঁজাসহ একজন গ্রেফতার জাককানইবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফাহাদ, সম্পাদক আসলাম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি আজ সন্ধ্যা ৭টায় সিইসির ভাষণের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আফ্রিকার প্রাণী নীলগাই, জেব্রা ও কমনইল্যান্ড পরিবারে যুক্ত হলো পাঁচ নতুন ত্রিশালের সাখুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রিফাত ও সম্পাদক রিজন

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও আমার দুঃসহ স্মৃতি বেদনার রাত -সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া

Reporter Name
  • আপডেট শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪৭ দেখেছে

বিরোধী দলের রাজনীতির কারণে স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছিলাম অনেক আগেই। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ফ্যাসিবাদী শাসন বন্দুকের নল,জেল জুলুমের তোয়াক্কা না করে রাজপথেই সপে দিয়েছিলাম নিজেকে। সারা জীবনের সাধ ছিলো আমার সর্বোচ্চ ত্যাগ দিয়ে হলেও ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনাশাহীর আমল থেকে দেশকে মুক্ত করবো।জুলাইয়ে কোটা সংস্কার ও তার প্রেক্ষিতে হাসিনার পুলিশের দ্বারা ছাত্র খুন আমাকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছিলো। রংপুরে আবু সাঈদ আর চট্টগ্রামের ওয়াসিমের প্রাণদান আমাকে আরো তীব্র বেগ এনে দিয়েছিলো। দৃঢ়ভাবে মনে হয়েছিলো খুনি হাসিনার মসনদ ভাঙার এটাই মোক্ষম সময়।

১৯ শে জুলাই ২০২৪|| সারাদেশে সহিংতা কারফিউ চলছে।কারফিউয়ের মধ্যে অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আমাদের দলীয় নির্দেশনা সেদিন জাতীয় প্লেসক্লাবে আমাদের কর্মসূচি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক জনাব তারেক রহমানের নির্দেশনায় জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়ি। খবর এলো রুহুল কবীর রিজভী ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তখন সেগুন বাগিচা এলাকায় শরিফ উদ্দিন জুয়েল ভাইয়ের নেতৃত্বে মিছিল সহকারে অবস্থান নেই।চারপাশে খুনী হাসিনার রক্ষীবাহিনী পুলিশ ঘিরে ফেলে।শুরু হয় গুলি টিয়ারশেল।সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কাকরাইল পৌঁছাই। পৌঁছে দেখি হাজার হাজার নেতাকর্মী সেখানে অবস্থানরত। উপস্থিত আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সহ সকল পর্যায়ের কর্মী সমর্থকরা। মির্জা আব্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, আমিনুল হক, নুরুল ইসলাম নয়ন ভাইরা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ নেতৃত্বে ছিলেন। রাজপথের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা পুলিশের গুলি টিয়ারশেলের বিপরীতে দাঁড়াবার প্রশিক্ষণ বহু আগেই রপ্ত করেছিলাম। ১৯ জুলাই কাকরাইলে আমাদের সাথে পুলিশের তিব্র সংঘর্ষ হয়।চলে টিয়ারশেল গুলি সাউন্ড গ্রেনেড। কিন্তু পিছু হটিনি। সাহসের সাথে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিরোধ করে গিয়েছি।

১৯ জুলাইয়ের সংঘর্ষে আমার তীব্র সক্রিয়তা ও অতীতে রাজপথের প্রতিরোধের কারণে ডিবি পুলিশের টপ খাতায় নাম লেখা হয়ে গিয়েছিলো। অতীতেও গ্রেফতার নির্যাতন গুমের শিকার হয়েছি। তাই জুলাইয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ কৌশলে ছিলাম। জানতাম কোনোভাবেই ধরা পড়া যাবে না। রাজপথে থেকে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। তবে ডিবি পুলিশও হাল ছাড়েনি আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে।একের পর এক টিম আমাকে ধরার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। আমার সম্ভাব্য সকল অবস্থানে তারা তালাশ করে, আমাকে না পেয়ে ২১ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত আমার কাছের ১১ জনকে আটক করে ফেলে। ১১ জনকে আটক নির্যাতন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। তাদের আমাকে লাগবেই। কারণ তারা পরখ করেছে বাড্ডা, বসুন্ধরা গেট, কুড়িল এলাকায় আন্দোলনে আমার শক্ত ভূমিকা সক্রিয়তা।

২৫শে জুলাই আমার জন্য নেমে আসে দুর্বিসহ রাত। আমি বাংলাদেশের কোনো মোবাইল সিম ব্যবহার করতাম না। তবুও তারা কোনোভাবে আমার অবস্থান টের পেয়ে যায়। আমার অবস্থান শনাক্তের পর ডিবির কুখ্যাত অফিসার হারুণের নেতৃত্বে খিলগাঁও জোনের এডিসি সহ অন্যান্য অফিসাররা সহ ২০০/২৫০ ডিবি পুলিশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আমার অবস্থানরত বাসা শনাক্ত করে ফেলে।সেদিন আমি বাসায় একা অবস্থান করছিলাম।ঘড়ির কাঁটায় রাত তখন ১২.৪০ এর কিছু বেশি। নিচে হৈহুল্লোর শব্দ শুনে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখি নিচে অসংখ্য ডিবি পুলিশের সদস্য বাসায় ঢুকার চেষ্টা করছে। নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেদিন আমাকে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে পরখ করতে হয়েছে। আমি বাসার ২য় তলায় অবস্থান করছিলাম, প্রাণ বাঁচাতে ৯ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠি।

বিল্ডিংয়ের পেছন দিয়ে ৯ তলা থেকে এসির রড বেয়ে নামার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তড়িঘড়ি করে একের পর এক পা ফেলছি। জানি ধরা পড়লে জীবন যাবে এদিক নিচে পড়লেও পৃথিবী ছাড়া। ৯ তলা ৮ তলা করে যখন ৭ তলায় পৌঁছাই তখন পা পিছলে নিচে পড়ে যাচ্ছিলাম। আল্লাহ রহমতে হাত ফসকে যায়নি, এসির রডে ঝুলছিলাম। মনে হচ্ছিলো, আমার দুনিয়া এখানেই বন্ধ হয়ে আসছে। তখনো আরো ৬ তলা বাকি, ভয় ডর জয় করে শুধু আল্লাহ্ কে ডাকছিলাম নিজের মায়ের কথা মনে করছিলাম। আমাকে যে করেই হোক নামতে হবে। গ্রিল বেয়ে এসির রড ধরে ১তলায় পোঁছাই। শরীর আর কুলাচ্ছে না, সারা শরীর অবশ হওয়ার দরুন। তবুও হাত চেপে ঝুলে রয়েছি, আমাকে বাঁচতে হবে। যখন মাটি অতি নিকটে তখন পা পিছলে ভবনের পিছনে ফাঁকা প্লটে পড়ে যাই।

হাতে পায়ে ব্যথা পা চলছে না। স্থবির দেহ মনের জোরে এগিয়ে নিয়ে গেছি। রাত্রি তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘড়িতে তখন সময় হয়তো ১ টার কাছাকাছি। কার কাছে যাবো কিভাবে বেরুবো কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সেদিন রাতে আশ্রয় নিয়েছিলাম একটি ফাঁকা প্লটে। পানি ঘন ঘাস কচুরিপানা। মশা আর পোকামাড়কের কামড়।সেদিনের রাত্রি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ রাত্রি মনে হচ্ছিলো। কচুরিপানা আর কাদা এসব গায়ে জড়িয়েই বাকি রাত্রি পার করেছি।একদিকে মৃত্যুর ভয় আরেকদিকে এখান থেকে বাঁচার পথ খোঁজা। ভোরের আলো আর মসজিদে আযানের ধ্বনি যেন আশা দেখাচ্ছিলো। খুব সকালে পাথরের ট্রাকে করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ছাড়ি। তখন আমি খালি পায়ে পড়নে লুঙ্গি আর একটা টিশার্ট। এই বেশেই আমাকে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছে। আমি জানতাম আমাকে পেলে নির্ঘাত মেরে ফেলবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর এক অফিসারের মাধ্যমে জেনেছিলাম, সেদিন আমাকে শেষ করে দেওয়ার অর্ডার ছিলো। আমাকে না পেয়ে দরজা কেটে বাসায় ঢুকে তছনছ করেছিলো সব। নিয়ে গিয়েছিলো আমার পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, নগদ অর্থ সহ মূল্যবান সব কাগজ পত্র।

বিল্ডিংয়ের রড বেড়ে নয় তলা থেকে নামা কচুরিপানায় জড়িয়ে রাত্রি অতঃপর স্থান ত্যাগ। জীবন আমার কাছে ধরা দিয়েছিলো সিনেমার চেয়ে কঠিন বাস্তবে। যে গল্প সিনেমায় দেখেছি তা আমার জীবনে বাস্তবে ঘটে গেছে। আজ জুলাইয়ের অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। তবে সেই দুঃস রাত কঠিন স্মৃতি ছাদ থেকে পড়ার গল্প আমাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বারংবার স্মৃতিতে ভাসে নতুন জীবন পাওয়ার মুহুর্ত।

দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে মাতৃভূমি থেকে এক স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। কঠিন দিন কেটে গেছে তবুও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে সেই রাত্রিগুলো। এই অভিজ্ঞতা আমাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। যতদিন বেঁচে আছি জীবনটাকে বোনাস মনে হয়।বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে জনগণ চায়তো সরকারি দলের তকমা লাগবে। আমাদের অভিভাবক জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে নব বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমরা দেখছি তা বাস্তবায়ন করবো। ৩১ দফার প্রতিটি কথা প্রতিশ্রুতি জনগণকে আমরা পূরণ করবো। যে কঠিন জীবন যে ত্যাগ অত্যাচার আমাদের সইতে হয়েছে সে বাংলাদেশকে পথ হারাতে দিবো না। আল্লাহ সর্বশক্তিমান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংক্রান্ত আরও খবর

ফেইসবুক পেজ

© এই ওয়েবসাইটের  লেখা, ছবি ও ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি © Developing By :  ESAITBD Software Lab
ESAITBD Sof-Lab UAE/BD