ময়মনসিংহের ত্রিশালে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। রবিবার ১৫ নভেম্বর দুপুরে পৌর এলাকার ত্রিশাল সরকারি নজরুল একাডেমির অফিস কক্ষে কিশোর গ্যাং সদস্যরা রুকনুজ্জামান তাজ নামের নবম শ্রেণিতে পডুয়া এক স্কুল ছাত্রকে লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ্য মাথার কাটা অংশে ৫টি সেলাই করেন।
স্থানীয়রা জানান, হামলাকারী কিশোরগ্যাং সদস্য আলমগীর, জাহাঙ্গীর, রাব্বি, মোজাম্মেল, শাহিক, আনোয়ার, রিসাত সহ ২০/২৫ জনের সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং সদস্য। মাইন নামের এক স্কুল ছাত্রের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় গ্যাং সদস্যরা। এসময় রুকনুজ্জামান মোবাইল ফেরৎ চাইলে তার উপর এ হামলা চালানো হয়।
ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে ভর্তি আহত ছাত্রকে দেখতে যান ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোস্তাফিজুর রহমান ও ত্রিশাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিশোর গ্যাং সদস্যরা ছাত্রদের সাইকেল, মোবাইলসহ ছিনতাই, চুরি করে। প্রতিবাদ করলে বা বাঁধা দিলে হামলা চালায়। এদেও অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা। কিছু বললে ছুরি পর্যন্ত চালিয়ে দেয়।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম কামরুল হাসান জানান, স্কুলের অফিস কক্ষে হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করছি এবং স্কুলেটি সিসি টিভি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সিসি টিভি’র ফুটেজের মাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে এ ঘটনার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
থানার ওসি জানান, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হামলার ঘটনায় যতযত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় কবির বাল্য বিদ্যাপীঠ। স্কুলের সুনাম রয়েছে সারাদেশ ব্যাপী এর সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ত্রিশালে স্কুল-কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থী ছোট ছোটে গ্রুপে ভাগ হয়ে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও মারাত্বক হামলা করতে দ্বিধাবোধ করছে না তারা। পারিবারিক শিক্ষা, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে কিশোররা এমন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশু-কিশোরদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে অভিভাবকদের আরো যত্ববান হওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান, পারিবারিক বন্ধন জোরদার করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, বির্তক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আয়োজনের ব্যবস্থা করা, স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনসহ শিক্ষকদের মোটিবেশনাল ভুমিকা রাখা, গণমাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও অনুষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি সুবিধা বঞ্চিত ও দারিদ্র শিশু-কিশোরদের সুশিক্ষার ব্যবস্থা করা হলে শিশু-কিশোরদের গ্যাং কালচার থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল।