শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকা-বেইজিং সুসম্পর্ক এবং ভারতীয় পত্রিকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষা

Reporter Name
  • আপডেট শনিবার, ২০ জুন, ২০২০
  • ৩৬৫ দেখেছে

লাদাখে সংঘর্ষের পরে ভারত ও চীনের সম্পর্কে গুরুতর অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যেই ভারতের দাবিকৃত তিনটি ভূখণ্ড নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র পাস করেছে নেপাল। এখানেও চীনের হাত রয়েছে বলে দাবি নয়া দিল্লির। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে হলেও বাংলাদেশকে কাছে টানছে চীন। আর এতে অস্থিরতায় ভুগছে ভারত। ভারতীয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বললেন চীন বাংলাদেশে খয়রাতির টাকা ঢালছে।

অর্থনৈতিক বিনিয়োগ থেকে শুরু করে নানা সংকটে পাশে থেকে চীন বরাবরই বাংলাদেশকে পাশে চায়। বাংলাদেশও চীনের সাথে সুসম্পর্কই বজায় রেখেছে। ভারতও বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বন্ধু রাষ্ট্র বলেই পরিচিত। অনেক সময় কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ভারত বাংলাদেশের কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। তবে লাদাখ সীমান্তের সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে ভারত-চীন যখন উত্তেজনার চরম পর্যায়ে, তখন দোটানায় পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। খুব হিসেব নিকাশ করেই পা ফেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

সম্প্রতি চীন কয়েক হাজার পণ্য রপ্তানিতে শুল্কছাড়ের বিশাল প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকাকে। ঢাকার কাছে অবশ্যই এমন প্রস্তাব সুখকর। কারণ চীনের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি প্রচুর। সেটা লাঘবেও এই সুবিধা বিশেষ কাজে লাগবে ঢাকার। বাংলাদেশের ৫ হাজার ১৬১টি পণ্য রপ্তানিতে ৯৭ শতাংশ শুল্কছাড়ের বিষয়ে রাজি হয়েছে বেইজিং। লাদাখে এমন সংকটকালে চীনের দেওয়া এই সুবিধা কিছুতেই ভালো লাগছে না দিল্লির।

এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভারত বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে নানাভাবে লেখালেখি হচ্ছে। তবে একতরফাভাবে চীনকে দোষারোপ করেই লিখছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে। এটাকে তারা চীনের কূটনৈতিক বিনিয়োগ হিসেবে দেখছে। যদিও বাংলাদেশ চীনের কাছে আগেই এর আবেদন করেছিল। ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ হিসেবে চীনের কাছে শুল্কছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিল ঢাকা। তবে কাকতালীয়ভাবে হোক আর ইচ্ছাকৃত হোক ১৬ জুন, অর্থাৎ লাদাখ সংঘর্ষের মাত্র একদিন পরেই বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দেয় বেইজিং। আগামী ১ জুলাই থেকে এ শুল্কছাড় কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে, এশিয়া-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের চীনে শুল্কমুক্ত ৩ হাজার ৯৫টি পণ্য রপ্তানির তালিকায় আরও কয়েক হাজার পণ্য অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এ বার সব মিলিয়ে ৮২৫৬ পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিল চীন।

এতেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছে ভারত। তাদের চিন্তা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব খোয়াচ্ছে দিল্লি। চীনের একক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে এখানে। চিন্তার ভাঁজ পড়ারই কথা অবশ্য, কারণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশই তাদের শেষ বন্ধু। পাকিস্তান, নেপাল, ভূটানের সাথে নিবিড় সম্পর্ক এখন চীনের এবং শেষমেষ বাংলাদেশের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির দিকেই।

ভারতের এক প্রভাবশালী বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার অপমানসূচক শব্দ ব্যবহার করে লিখলেন- বাংলাদেশে ‘খয়রাতির টাকা’ ছড়াচ্ছে চীন। বাংলাদেশ সরকার এবং সাধারণ জনমনে ধাক্কা লাগাটা অস্বাভাবিক নয়। পত্রিকার এমন শব্দ প্রয়োগ কিছুতেই কাম্য নয় এবং এটা রীতিমতো একটি পত্রিকার ঔদ্ধত্য। একটি খ্যাতনাম গণমাধ্যম হিসেবে অন্তত শব্দটি তাদের অনলাইন ভার্সন থেকে তুলে দেওয়া উচিত।

বেশ সময় ধরেই ভারতের সাথে সুসম্পর্ক যাচ্ছে না ঢাকার বলে খবরে বলা হচ্ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর থেকেই কিছুটা টানাপোড়েন পড়ে ঢাকা দিল্লির সম্পর্কে। কারণ সে সফরে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি বলে জানা যায়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণে ভারত-বাংলাদেশের দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ দেখতে কলকাতা সফরে গেলেও সরকারি তৎপরতা ছিল না বললেই চলে। এরপর বাংলাদেশি মন্ত্রীদের ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরসহ পানিচুক্তি বৈঠকও স্থগিত করে ঢাকা। তড়িঘড়ি করেই দিল্লী তখন ঢাকার শরণাপন্ন হয় বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে। তবে সেটা কতটা মিটেছে তা বলা মুশকিল। তাছাড়া ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আপত্তির মুখেই পাশ করে এ আইন।

এরমধ্যেই চীন বাংলাদেশকে ব্যাপক কর ছাড় দিলে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে। তাতে অস্বস্তি বাড়বেই দিল্লির। ভারতের এই সংকটকালে মূলধারার পত্রিকাগুলোর আরও দায়িত্বশীল থেকে ভাষার সংযত ব্যবহার দরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংক্রান্ত আরও খবর

ফেইসবুক পেজ

© এই ওয়েবসাইটের  লেখা, ছবি ও ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি © Developing By :  ESAITBD Software Lab
ESAITBD Sof-Lab UAE/BD