শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

ছোট গল্প- “অচেনা”

Reporter Name
  • আপডেট রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৫৪২ দেখেছে
ছোট গল্প- "অচেনা", লেখক- কবি সাদিয়া সুলতানা নীলু

তানিশা ছোট থেকেই খুবই জেদি, বদমেজাজি মেয়ে। বাবা মায়ের কথাও শোনেনা। শুধু নিজের স্বার্থ বুঝে। নিজের সুখের জন্য অন্যকে কষ্ট দিতেও পিছপা হয়না। তানিশা জিহানের স্ত্রী। পারিবারিক ভাবেই তাদের বিয়ে হয়েছে। জিহান খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। নম্র ভদ্র ধার্মিক ছেলে। বলতে গেলে তানিশার স্বভাবের ঠিক বিপরীত স্বভাবের ছেলে।

তানিশা : (চিল্লায়ে) এত দেরী হল কেন?
জিহান : (শান্ত স্বরে) অফিসে মিটিং ছিল।
পকেট থেকে একটি তাজা গোলাপ তানিশার হাতে দিতেই, তানিশা গোলাপটি ছিঁড়ে মেঝেতে ফেলে দিল। তানিশাকে ভালোবেসে জিহান যতবার কিছু উপহার দিয়েছে, ততবার অপমানিত অবহেলিত হয়েছে। জিহানের মনে অনেক কষ্ট ভালোবেসে স্ত্রীকে উপহার পর্যন্ত দিতে পারেনা। আজ অনেক শখ করে গোলাপটি এনেছিল, ভেবেছিল আজ যদি খুশি হয়, অশান্তি না করে। সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে এসে কোনদিন একটু শান্তি পায়নি জিহান, স্বস্তিতে নিঃশাস পর্যন্ত ফেলতে পারেনা যন্ত্রণায়।

জিহান মন খারাপ করে টিভিতে খবর দেখতে লাগলো। রাত তিনটা বাজে জিহানের চোখে ঘুম নেই, দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ভেবেছিল তানিশা খাবার খেতে ডাকবে কিন্তু সে নিজে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাদের বিয়ের তিন বছর হলো, তাদের এক বছরের একটি ছেলে আছে। বিয়ের প্রথম দিন থেকে জিহান তানিশাকে অনেক কেয়ার করে, আর সববিষয়ে সবসময় সেক্রিফাইস করে। তানিশা যখন যা চায় জিহানের কষ্ট হলেও তার চাহিদা পূরণ করে, তানিশার পছন্দ, অপছন্দের মূল্যায়ন করে।

সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত হলেও, তানিশার সুখের জন্য, তার খুশির জন্য তার সাথে বাসার কাজে অংশগ্রহণ করে। তারপরেও যেন তানিশা ভালো থাকে, সংসারে অশান্তি না করে, তাকে একটু বুঝে, তার ভালোলাগার মূল্য দেয়। কিন্তু সে যতই তানিশাকে সেক্রিফাইস করে, তানিশা ততোই তাকে অবহেলা করে, কষ্ট দেয়। কষ্ট আর অবহেলা পেয়ে পেয়ে জিহানের মনের গভীর থেকে তানিশার প্রতি পূর্বের ন্যায় ভালোবাসা আর অনুভব করতে পারছেনা, মাঝে মাঝে খুবই বিতৃষ্ণা হয়, ইচ্ছে করে তানিশাকে ছেড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে গিয়ে তার অত্যাচার থেকে বাঁচতে, কিন্তু ইচ্ছে হলেও উপায় নেই, ছোট ছেলেটার দিকে তাকিয়ে সে কিছু করতে পারেনা, সমাজের কথা ভেবে কিছু করতে পারেনা। তাই নিরবে তানিশার চিৎকার, চেঁচামেচি সহ্য করে। নিজের বুকের কষ্ট পাথর চাপা দিয়ে রাখে। জিহান নিজেকে খুবই অসহায় মনে করে, পৃথিবীতে সুখ বলে কিছু আছে সে কখনোই অনুভব করতে পারেনা। তারপরেও তানিশাকে ভালো রাখতে তাকে সবসময় কেয়ার করে। তানিশা নিজের সুখ ষোল আনা বুঝে, জিহানের মনের অবস্থা কখনোই বুঝার চেষ্টা করেনা। এভাবেই বিয়ের ত্রিশ বছর কেটে গেল।

ঘর হল, বাড়ি হল, নাতি-নাতনি হলো। একসাথে ত্রিশ বছর পার করার পরেও মনের দিক থেকে তাদের মিল হলো না। প্রকৃত সুখ শান্তি আর ভালোবাসায় ভরপুর সংসার তাদের হলো না। তাদের সংসারে ধন-সম্পদের কমতি ছিলনা, শুধু দুজনের মনের অমিল ছিল। যদি দুজনের মনের মিল থাকতো, মন যদি মনকে চিনতো, তবে তাদের সংসারটিতে স্বর্গ সুখ বিরাজ করতো। কিন্তু হায়! দূর্ভাগ্য ত্রিশ বছর একই বিছানায় থেকেও তারা একে অপরের কাছে মনের দিক থেকে অচেনাই রয়ে গেল। -[সমাপ্ত]-

লেখক-
কবি সাদিয়া সুলতানা নীলু

বি:দ্র:- সংসারে স্বামী স্ত্রী দুজনের উচিত একে অপরকে বুঝা, একে অপরের পছন্দ অপছন্দের, চাওয়ার মূল্য দেওয়া। একে অপরের মুখ দেখেই মনের কথা বুঝার চেষ্টা করা, মনের কথা বুঝা। একে অপরের প্রতি যতœশীল হওয়া, সেক্রিফাইস করা, ছোটছোট উপহারের মাধ্যমে ভালোবাসার সম্পর্ক সুদৃঢ় করা। মাঝে মাঝে সাধ্য অনুযায়ী ঘুরতে যাওয়া। একজনের মন খারাপ হলে, যেকোন উপায়ে তাকে খুশি করা। সবসময় খুনসুটি আর হাসি-খুশিতে থাকা, বিপদে আপদে সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থাকা, সংসারে অর্থের কমতি হলেও যেন ভালবাসার কমতি না থাকে, এরকম মনের সম্পর্ক গড়ে তোলার মাঝেই সংসার জান্নাতের বাগান হতে পারে। আর শুধু একজনে সেক্রিফাইস করলে, কেয়ার করলে, ভালোবাসলে সংসারে কখনোই সুখ আসেনা। এক্ষেত্রে একজন কাঁদে কষ্ট পায়, আর অন্যজন স্বার্থপর হয়ে শুধু নিজে সুবিধা নেয়, সুখ পায়। এভাবে একতরফা সুবিধা আর ভালোবাসা দিতে দিতে এক সময় একজন অপরজনের প্রতি বিরক্ত হয়, অপরজনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে, ফলে সংসারে অশান্তি হয়, কেউ সুখী হতে পারেনা। তাই সংসারে সুখী হতে হলে দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা থাকতে হবে, মনের মিল থাকতে হবে, দুজন দুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যত্নশীল হতে হবে। দুজনকেই আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংক্রান্ত আরও খবর

ফেইসবুক পেজ

© এই ওয়েবসাইটের  লেখা, ছবি ও ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি © Developing By :  ESAITBD Software Lab
ESAITBD Sof-Lab UAE/BD