কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে র্যাব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
আটক তিনজন হলেন কক্সবাজারে কর্মরত এপিবিএন-১৪-এর উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান, কনস্টেবল রাজীব ও আবদুল্লাহ। গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে এ তিনজনই এপিবিএনের চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি আর রামু থানায় একটি মামলা করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ঘটনার দিন এপিবিএনের ওই তিন সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
সিনহাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এঁদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক। বাকিদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ছাড়া পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় র্যাব।
ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশ জানায়, সিনহা হত্যা মামলায় মোস্তফা ও টুটুল নামে যে পুলিশ সদস্যদের কথা বলা হয়েছে, এই নামে তাদের কোনো পুলিশ সদস্য নেই।
এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে শিগগিরই রিমান্ডে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
আশিক বিল্লাহ গতকাল রাতে বলেন, ‘তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে যেকোনো সময় রিমান্ডে নেওয়া হবে। সেটা কালও (আজ মঙ্গলবার) হতে পারে। তবে এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরো বলেন, ‘এ ছাড়া শিপ্রা দেবনাথের ল্যাপটপ, মোবাইল, ক্যামেরা, হার্ডডিস্কসহ মোট ২৯টি সামগ্রী রামু থানা থেকে নিজেদের জিম্মায় নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আমাদের অনুমতিও দিয়েছেন। আমরা রামু থানায় যোগযোগ করছি। তারা দিয়ে দিলেই আমরা জিনিসগুলো বুঝে নেব।’
মামলার ১ নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। আজ মামলার ২ নম্বর আসামি টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
গতকাল রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি এর আগে এ মামলার আসামি আরো সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’ তাঁরা হলেন বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।
তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আরো আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহাম্মদ শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ।
কমিটির সদস্যরা গত রোববার গণশুনানি করে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন সংস্থার মোট ৬৯ জনের বক্তব্য নেন। শুনানিতে নয়জন সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার ৬০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার আশা করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান।