চট্টগ্রাম বন্দরে ভোজ্যতেল ঘোষণা দিয়ে তরল কোকেন আমদানির ঘটনায় চোরাচালানের ধারায় করা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে র্যাব।
চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় গতকাল সোমবার অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়া হয় বলে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে ভোজ্যতেলের ঘোষণায় আমদানি করে আনা ৯ হাজার কোটি টাকা মূল্যের কোকেন চোরাচালান মামলার অভিযোগপত্রটি আমরা সিএমএম আদালতে দাখিল করেছি। অভিযোগপত্রে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন পলাতক, একজন জামিনে ও পাঁচজন কারাগারে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ (৪৯), একই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা প্রকাশ সোহেল (৩৯), আবাসন ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা কামাল (৪২), সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মেহেদী আলম (৩১), গার্মেন্ট পণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী মো. আতিকুর রহমান (২৯), কসকো শিপিং লাইনের ম্যানেজার এ কে এম আজাদ (৪৮), সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম (৩২), খানজাহান আলী গ্রুপের পরিচালক মোস্তাক আহাম্মদ খান (৪৫), লন্ডনে অবস্থানরত ফজলুর রহমান (৩৫) ও মো. বকুল মিয়া (৩১)।’
এর আগে ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর একই মামলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও নারাজি দিয়েছিল রাষ্টপক্ষ। পরে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।
২০১৫ সালের ৭ জুন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার আটকের পর সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। বলিভিয়া থেকে মেসার্স খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে আমদানি করা সূর্যমুখী তেলবাহী কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হয় উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দর থেকে। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে আদালতের নির্দেশে কনটেইনার খুলে ১০৭টি ড্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ঢাকার বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় এতে তরল কোকেনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় ওই বছরের ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও কর্মচারী গোলাম মোস্তফা সোহেলকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এ মামলায় ১৯ নভেম্বর এজাহারভুক্ত আসামি নূর মোহাম্মদকে বাদ দিয়ে আটজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) মো. কামরুজ্জামান। এরপর ৭ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ না করে র্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে এ বছরের ৪ এপ্রিল মামলায় নূর মোহাম্মদকে অভিযুক্ত করে মহানগর হাকিম আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে র্যাব-৭।
সবশেষ আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে র্যাব-৭ এর সদর দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সে কোকেন মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করা হয়।