ময়মনসিংহের ত্রিশালে উপমহাদেশের কিংবদন্তী আবুল মনসুর আহমেদের ১২২তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সামাজিক সংগঠন ‘সঞ্জীবন যুব সংস্থা’র আয়োজনে বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টম্বর) বিকালে ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের মধ্যে দিয়ে এ কিংবদন্তী জন্মবার্ষিকী পালিত হয়।
স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, আবুল মনসুর আহমেদ ৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রুপাত্মক রচয়িতা। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)’ তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রচনা।
তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাশ করেন এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন বিষয়ে পাশ করেন। এই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের। তিনি ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন।
আবুল মনসুর আহমেদ রাজনীতিবিদ হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে তিনি বাংলার মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তানের আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত হন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন আবুল মনসুর আহমেদ। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন। আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান আবুল মনসুর আহমেদ। পূর্ববাংলার মঙ্গলের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন আবুল মনসুর আহমেদ। ১৯৭৯ সালে আবুল মনসুর আহমেদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়ে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্মরণ সভার আলোচানা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, পৌর মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ, ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি খোরশিদুল আলম মুজিব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ নোমান, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম শামিম, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, ত্রিশাল অনলাইনের প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল হক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রনি প্রমুখ। আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন সঞ্জীবন যুব সংস্থার সভাপতি ফাহিম মন্ডল।