রাজশাহীর তানোরে মাটির দ্বিতলা বাড়ি উচ্ছেদ করে সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত সোমবার (২১মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে পৌর এলাকার তালন্দ সরদার পাড়ায় ঘটেছে এ বাড়ি উচ্ছেদের ঘটনা। এঘটনার পর থেকে বাড়ির মালিক বয়োজ্যেষ্ঠ আব্দুর রহমান ও তার স্ত্রী না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে বাড়ির মালামাল নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমনকি প্রতিপক্ষ মজিবুর ডাক্তারের ভয়ে তাকে আশ্রয় পর্যন্ত দেয়নি কেউ বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে আম গাছের নিচে অন্যের জায়গায় কোন রকমে বাস করছেন দিশেহারা পরিবারটি। বৃষ্টির পানি হলেই দূর্ভোগের শেষ থাকবে না বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, তালন্দ কলেজের পূর্ব দিকে রাস্তার পশ্চিমে জন্মের পর থেকে বসবাস করছেন মৃত দিদার বক্সের পুত্র অসহায় ভুমিহীন আব্দুর রহমান। বাড়িটি দীর্ঘদিনের পুরানো। কিন্তু গত সোমবার কোর্ট থেকে প্রশাসন বুলডোজার নিয়ে এসে পুরো বাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। বসতবাড়ির চারদিকে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে দেওয়া আছে।
সেখানে সরদার পাড়া মহল্লার বেশকিছু বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলারা আসেন কিছু পুরুষও ছিল তারা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মজিবুর ডাক্তারের সাথে মামলা চলে আসছিল বলে আমরা জানি ।
এঅবস্হায় গত সোমবার প্রশাসনের লোকজন এসে প্রথমে মাপযোগ শুরু করেন, এরপর ভেঙে চুরমার করে ফেলেন। আদালতের নির্দেশ ছাড়া এভাবে লাল নিশানা টাঙ্গিয়ে ভাঙ্গা হয়না। আবার পাড়ার লোকজনও এতকিছু বোঝেনা। তাদের ভাঙ্গার দৃশ্য স্হানীয় এক যুবক মোবাইলে ভিডিও করলে তার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে সব ডিলেট করে দেওয়া হয় বলেও এক যুবক জানান।এমনকি কেউ কোন কথায় বলতে পারেন নি। শুধু নিরবে দেখে গেছে। রহমানের স্ত্রী ভাত রান্না করছিল সেটাও বের করতে দেওয়া হয়নি। কিছুই বলারও নাই শুধু দেখে যাও। আদালতের নির্দেশে দিনে দুপুরে উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছে, তাহলে মোবাইলে ধারন করলে সমস্যা কোথায় এমনও প্রশ্ন বিরাজমান পাড়ার বাসিন্দাদের মাঝে।
আব্দুর রহমান জানান, আমি এখানে প্রায় ৫০/৬০ বছর ধরে বসবাস করছি।আমার প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। তার অংশ মজিবুর ডাক্তার কিনেছিলেন। প্রায় ২০/২২ বছর আগে মজিবুর ডাক্তার আমাকে বলে রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে তোমার স্ত্রী যে টুকু অংশ বিক্রি করেছে তার নাদাবি দিতে হবে।কিন্তু আমার সাথে চিটিং করে মুহুরির সাথে যোগসাজশে বসতবাড়ি রেজিষ্ট্রি করে নেয়। অমি মুর্খ অশিক্ষিত কিছুই জানিনা। এলাকার অনেকে বলতে থাকেন তোমার বাড়ি ভিটাও নিয়ে নিয়েছে মজিবুর। সার্টিফাই কপি তুল দেখছি সত্যি তাই।
তিনি আরো বলেন, মাটির দ্বিতলা বাড়ি প্রায় ৫৫/৬০ বান্ডিল টিন ছিল সবকিছুই নষ্ট হয়ে পড়েছে। আমাকে সময় দিলে ছেড়ে দিতাম। ডাক্তার মজিবুর প্রভাবশালী, তার সাথে লেগে আমি তো পারব না। তালন্দ মৌজার অন্তর্ভুক্ত ৪৫ নং আরএস খতিয়ানে ১৩৩৮ ও ১৩৩৭ নম্বর দাগে বাশঝাড় ভিটা মিলে ২২ শতাংশ জমির মধ্যে ০৯ শতাংশ জমির মালিক আব্দুর রহমান। তিনি ১৪২৩ বাংলা ও ২০১৬ ইংরেজি সাল পর্যন্ত খাজনা দিয়েছেন।
রহমানের স্ত্রী জানান, বাড়ির ভিতরে আম,কাঠাল, সজিনা ও লেবুর গাছ ছিল। মুরগী ও বাচ্চা গুলো মারা গেছে। কয়েকটা ছিল সেগুলো আসছে না। আমাদের থাকার জায়গা নেই মুরগী কোথায় থাকবে।সোমবার দুপুর থেকে খাওয়া দাওয়া নাই।খোলা আকাশের নিচে বাড়ির মালামাল রেখে পাহারা দিচ্ছি। জীবনের শেষ আশ্রয় স্হল বসতবাড়িও শেষ। আমাদের দুটি কন্যা সন্তান আছে।তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। যাব কোথায়, থাকব কোথায়, কি খাব কোনকিছুই বুঝতে পারছিনা। অন্যের কাজকাম করে কোনভাবে জীবন যাপন করি বলে হাওমাও করে কাঁদতে লাগেন।
প্রতিপক্ষ ডাক্তার মজিবুর রহমান জানান, রহমানের নিকট থেকে অনেক দিন আগে বসতবাড়ি কেনা হয়েছে। তিনি বিক্রি কবলা দলিল করে দিয়েছেন। আমি বিজ্ঞ আদালতে উচ্ছেদ মামলা করেছিলাম এবং রায়ও পেয়েছি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে উচ্ছেদ করেছে। যা কিছুই হয়েছে আইন মোতাবেক।