বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ১৯৫৩ সাল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। সাংবাদিকতায় পেশাগত জীবন শুরু করে পরবর্তী সময়ে প্রায় ১৪ বছর বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও পোল্যান্ডে শিক্ষকতা করেন। ১৯৯৫ সালে বিশ্বব্যাংকে যোগদান করেন ড. জাহিদ হোসেন। করোনা মহামারীর কালে ২০২০-২১ সালের জাতীয় বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে দেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ প্রতিদিনের সম্পাদকীয় বিভাগের শফিকুল ইসলাম
দেশ প্রতিদিন : করোনা মহামারীর সময়ে এবারের বাজেট নিয়ে মানুষের অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল এই বাজেটে মহামারী মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও দিকনির্দেশনাসহ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় ধরনের সংস্কার আসতে পারে। মহামারীকালের এই বাজেট বিশ্লেষণ করে সহজ কথায় আপনি কী দেখতে পাচ্ছেন?
জাহিদ হোসেন : সহজ কথায় বললে আমরা এই করোনা মহামারীর কালে একটা ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট আশা করেছিলাম। যেখানে অর্থনীতির বর্তমান অগ্রাধিকারগুলো প্রাধান্য পাবে। এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার তো স্বাস্থ্য খাত। এরপর আছে যারা জীবিকার ঝুঁকিতে আছেন তাদের পাশে দাঁড়ানো, অর্থাৎ সামাজিক সুরক্ষা খাত। এরপরই বলতে হবে খাদ্য নিরাপত্তার কথা, অর্থাৎ কৃষি খাত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, দীর্ঘদিন ধরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে আছে; আমাদের সন্তানরা শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে আছে। মার্চ-এপ্রিল-মে-জুন প্রায় চার মাস হয়ে গেল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে আমরা জানি না। তাই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার একটা বিকল্প পন্থা এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ একটা দিকনির্দেশনাও আমরা আশা করেছিলাম।
এখন আমরা বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি যে, এসব অগ্রাধিকারের সঙ্গে বাজেটে বরাদ্দের চিত্রটা মেলে কি না। কিন্তু এটা কেবল বাজেটে মোট যে বরাদ্দ সেটা কোন খাতে কত দেওয়া হলো সেটা বিচার করলে বাস্তবসম্মত হয় না। কারণ বাজেটে অনেক কিছু রাখতে হয় যেটা উত্তরাধিকার সূত্রে চলে আসছে। যেগুলোকে আমরা ‘লিগ্যাসি এক্সপেন্ডিচার’ বলি। যেমন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ, বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ ইত্যাদি তো দিতেই হবে। কাজেই মূল্যায়ন করতে গেলে আপনাকে দেখতে হবে বাজেটে আগের বছরের চেয়ে যে বৃদ্ধিটা করা হয়েছে সেই বৃদ্ধির বণ্টনটা আমাদের অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে মেলে কি না।
আমরা সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে। সেখানে কৃষি আছে পঞ্চম অবস্থানে। স্বাস্থ্য, যেটা এক নম্বরে থাকার কথা সেটা আছে তিন নম্বরে। আর সামাজিক সুরক্ষা খাত আছে নবম অবস্থানে। কিন্তু মনে রাখা জরুরি করোনা মহামারী মোকাবিলায় আমাদের দুটো অস্ত্র একটি হলো স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা। অর্থাৎ করোনা পরীক্ষা ও করোনার চিকিৎসা নিশ্চিত করা। সেজন্য চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী বা ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করছেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আরেকটি অস্ত্র হলো, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সমাজে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। জীবিকার তাগিদে যদি মানুষ পথে নেমে আসে তাহলে সেটা হবে না। অর্থাৎ জীবিকার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের খাদ্য ও নগদ অর্থ বা অন্যান্য সহায়তা নিশ্চিত করা। এজন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম স্বাস্থ্য খাত ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে যথাক্রমে তৃতীয় ও নবম অবস্থানে চলে গেল।
দেশ প্রতিদিন : এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য সম্মিলিত বরাদ্দ। কিন্তু সমালোচনা আছে যে বরাদ্দের বড় একটি অংশই খরচ হবে পরিচালন ব্যয়ে। যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। বাকিটা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বরাদ্দ। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন একটু ব্যাখ্যা করবেন?
জাহিদ হোসেন : যে কথাটা আপনি বললেন যে চলতি ব্যয়ই বেশি মূলধনী ব্যয় বা উন্নয়ন ব্যয় কম; স্বাস্থ্য খাতে সেটা হওয়া কিন্তু স্বাভাবিক। কারণ স্বাস্থ্য খাতে আপনার প্রয়োজন ওষুধপত্র, আপনার প্রয়োজন চিকিৎসা জনবল। ধরুন চিকিৎসক-নার্স-মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই-মাস্ক এসব দরকার। হাসপাতালগুলোতে বিপুল স্যানিটাইজার দরকার। তারপর চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীদের প্রণোদনা ও বীমার টাকা লাগবে। এসবই কিন্তু চলতি ব্যয়। কাজেই চলতি ব্যয়বৃদ্ধি সমস্যা নয়। বরং বিশেষ পরিস্থিতেতে চলতি ব্যয় আরও বেশি হতে পারত। কেননা, শুধু কভিড-১৯ ‘টেস্ট’ করা এবং ‘ট্রেস’ করার কাজেই তো বিপুল লোকবল প্রয়োজন। যিনি পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হলেন তিনি কোথায় কোথায় কার কার সংস্পর্শে গিয়েছেন সেটা খুঁজে বের করতে একটা মেকানিজম ডেভেলপ করতে হতো। এখন স্বাস্থ্য খাতের জনবলের অভাব মেটাতে প্রয়োজনে অন্যদের দিয়ে সেটা করানো যেত। সেজন্য স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ দিয়ে লোকবল নিয়োগ করা যেত। তারপর স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার খরচও আছে। এসব কাজে তো অনেক টাকা প্রয়োজন। তাই হেলথ সার্ভিসেস ডিভিশনে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার যে বরাদ্দ বৃদ্ধি সেটা আমার কাছে খুবই নগণ্য মনে হয়। এটা চলতি ব্যয়ে হলেও সমস্যা নেই। কেননা কভিড ও নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবায় আপনি এটা ব্যয় করছেন কি না সেটাই বড় কথা। খেয়াল করে দেখুন যে, সবার আগে গার্মেন্টস খাতের সুরক্ষায় যে প্রণোদনা দিলেন সেটাই তো ৫ হাজার কোটি টাকা! আর মানব ইতিহাসের অভূতপূর্ব এবং ভয়াবহতম একটা মহামারী থেকে ১৭ কোটি মানুষের সুরক্ষায় আপনি মাত্র ৫ হাজার ৫০০ কোটি বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেন! এবং এক্ষেত্রে অজুহাত দেওয়া হলো যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এর চেয়ে বেশি খরচ করার সক্ষমতা নেই। একটা স্বাভাবিক বছরে হয়তো এই যুক্তি গ্রহণ করা যেত। কিন্তু মহামারীতে যখন পুরো স্বাস্থসেবা ভেঙে পড়েছে, লোকজন সাধারণ সর্দি-জ্বরের চিকিৎসাও পাচ্ছে না, মানুষ করোনা রোগী নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটছে। এই অবস্থায় খরচ করার সক্ষমতা না থাকার যুক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশ প্রতিদিন : দেখা যাচ্ছে মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষরা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, মৌসুমি কৃষিশ্রমিক, দিনমজুর, ভাসমান জনগোষ্ঠীর মানুষরা। তাদের রক্ষায় সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ধরনের কর্মসূচি প্রয়োজন ছিল বাজেটে তার প্রতিফলন দেখছেন কি? এই খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তার বণ্টন কেমন হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
জাহিদ হোসেন : বলা হচ্ছে বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপক শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। আসলে একটা চাপ ছিল যে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে জিডিপির ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ করতে হবে। সে লক্ষ্য পূরণে এই খাতে এমন কিছু খরচ ঢোকানো হয়েছে যা অতীতে হতো না। যেমন ধরুন ২ হাজার কোটি টাকার সুদ যেটা মূলত বিত্তবানরাই পাবেন, সেটাও এখানে ঢোকানো হয়েছে। আবার সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ যা ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি সেটাও এখানে ঢোকানো হয়েছে। এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের লোকদের কি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা আছে? কোনোভাবেই না। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য যে ঋণ দেওয়া হবে সেটাও এই খাতে ঢোকানো হয়েছে। ঋণ তো সহায়তা না। এমন আরও অনেক কিছুই এই খাতে এসেছে, যা খাতের বিষয় না। আমার হিসাবে বাড়িয়ে ধরলেও কোনোভাবেই প্রকৃতই সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি না। কিন্তু সবমিলিয়ে এখানে দেখানো হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ০১ শতাংশ বরাদ্দ।
দেশ প্রতিদিন : এবার বাজেটের সবচেয়ে সমালোচিত একটি দিক হলো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবং করনীতি। বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়েই দুই ধরনের কালো টাকাই সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলো। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য সরকার যে ছাড় দিয়েছে তার তুলনায় অতিধনীদের জন্য দেওয়া ছাড়েও রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এদিকে, টাকা পাচার প্রমাণ হলেই ৫০ শতাংশ কর আরোপ করার যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন সেটাও বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
জাহিদ হোসেন : নিয়মিত যারা আইন মেনে কর দেন সেই সৎ করদাতাদের কাছ থেকে আপনি বেশি নিচ্ছেন আর যারা কর ফাঁকি দেয় তাদের কাছ থেকে আপনি কম নিচ্ছেন। এটা তো একেবারেই অনৈতিক ব্যাপার। কিন্তু আরেকটা বিষয় হলো এখানে দেখা যাচ্ছে বাজেটে সাংঘর্ষিক কিংবা স্ববিরোধী দুটো পদক্ষেপ আছে। একদিকে সরকার বলছে, আপনি যদি বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেন আমরা সে বিষয়ে কঠোর হব। যদি ‘ওভার ইনভয়েসিং’ বা ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ধরা পড়ে তাহলে যে পরিমাণ অর্থ পাচার করছেন তার ওপর ৫০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে ইনকাম ট্যাক্স আইনের অধীনে। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল? আপনি মাত্র ১০ শতাংশ করের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করে সারা বছর প্রশ্নহীনভাবে যে কোনো খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিলেন। বললেন এতে অর্থপাচার রোধ হবে। আবার অর্থপাচার ধরা পড়লে জরিমানা হিসেবে ৫০ শতাংশ কর দিয়ে মাফ পাওয়ার সুযোগ দিলেন। একই বাজেটে এমন সাংঘর্ষিক পদক্ষেপ তো কোনোভাবেই মেলানো যাচ্ছে না।
দেশ প্রতিদিন : আপনাকে যদি খুব সংক্ষেপে এবারের বাজেটের ৩টি ভালো দিক আর ৩টি মন্দ দিকের কথা বলতে বলি, আপনি কোন বিষয়গুলোকে ভালো বা মন্দ হিসেবে চিহ্নিত করবেন?
জাহিদ হোসেন : ভালো দিক! ভালো দিকের কথা বলব যে, বাজেট বক্তৃতায় সমস্যার স্বীকৃতিটা আছে যে আমরা একটা বড় ঝুঁকিতে আছি এবং অগ্রাধিকারগুলো ঠিকমতোই চিহ্নিত করা হয়েছিল। এটা ভালো দিক হলেও বরাদ্দ বণ্টনের কাজটা সেভাবে করা হয়নি। সেক্ষেত্রে প্রথম ভালো দিক হলো স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হলেও আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। আর দ্বিতীয় যেটা, আমরা গতানুগতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার গণ্ডিতে আটকে থাকিনি। বাজেটে বলা হয়েছে আমরা প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়নের চাহিদা পূরণ করব। অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেই যেসব সংকটের কথা ভাবা হতো, সময়ের প্রয়োজনে যে ব্যাংকের সক্ষমতা বা সুযোগটা আমরা কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটাকেও একটা ভালো দিক বলব। আর তৃতীয়ত নিম্ন-মধ্যবিত্তদের আয়কর অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং নিচের দিকের আয়করের হার কমানো হয়েছে এটা একটা ভালো দিক।
আর প্রথম ও দ্বিতীয় মন্দ দিক হলো, মহামারীর বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাত এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা এবং সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করার যে জরুরি প্রয়োজন ছিল সেটা হয়নি। তৃতীয়ত, মহামারী মোকাবিলার পাশাপাশি আমাদের তো সংস্কার কর্মসূচিও এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত চার মাস ধরে শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ কর্মসূচি প্রয়োজন ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে কীভাবে সেটা করা যায় সে রকম কিছুই আমরা বাজেটে দেখিনি।
দেশ প্রতিদিন : বাজেট তো একটা সরকারের ‘পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট’ বা ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন’। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’। আগামী মার্চেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করব। এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী চলছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে আমরা এই বাজেট পেলাম। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন মহামারীর কালে ‘উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশ’ থেকে এখন ‘বিপজ্জনক আয় বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কাছে এই বাজেটের রাজনৈতিক মূল্যায়ন কী?
জাহিদ হোসেন : আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মূল কারণ ছিল সীমাহীন বৈষম্য। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য। আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য, সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য, জাতিগত ও রাজনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষাদীক্ষা, চাকরিবাকরিতে বৈষম্য ইত্যাদি। ভাষার বৈষম্য থেকে ভাষা আন্দোলন এবং পরে অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে ছয় দফা এবং স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা আবারও বৈষম্যের যুদ্ধে হেরে যাচ্ছি। বৈষম্য আগে থেকেই বাড়ছিল। এখন করোনাকালে গিয়ে যে অবস্থায় আমরা পড়েছি তাতে বলা যায়, এই বাজেট বৈষম্য আরও বাড়ালে অবাক হবো না।