জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয়, মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সর্বত্রই চলছে অবৈধ মাটি কাটা মহোৎসব। থামাতে পারেনি মাটির নিরব কান্না। মাটির উপরিংশ টপসয়েল মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায়, পুকুর ভরাট রাস্তায় মাটি ফেলা এ যেন চলছে মাটি কাটা প্রতিযোগিতার উৎসব। দেখার কেউ নেই। এভাবে মাটির উপরিংশ মাটি কেটে নিয়ে মাটির উর্বর শক্তি হ্রাস পেলে ফসল উৎপাদনের কমে যাবে। ফলে আগামীতে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্ব অঞ্চলীয় গোয়ালেরচর, পলবান্ধা, গাইবান্ধা, চর গোয়ালিনী, চরপুটিমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলি জমি থেকে ব্রহ্মপুত্রনদের পাড়ঘেষে সর্বত্রই মাটি কাটছে একদল মাটি খেকু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। জমির মালিকদের একদল মাটি ব্যবসায়ী দালাল গরীব নিরীহ জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে তাদের নিকট মাটি কিনে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করছে উচ্চ দামে। এবার ইটের বাজার বেশী হওয়ায় ইট ভাটার মালিকরা উচ্চ দামে মাটি ক্রয় করতে দ্বিদাবোধ করছে না। এদিকে বর্তমান সরকারের ঘোষণা দেশের কোন জমি অনাবাদী থাকবে না। সরকারী এই বিধি নিষেধ কেউ তোয়াক্কা করছে না। চর গোয়ালিনী ইউনিয়নের আনন্দ বাজার, দশ আনী নদীর ব্রীজ সংলগ্ন সরিষা খেত থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে গিয়াস উদ্দিনের জমি থেকে মাটি কাটছে। এতে হুমকিতে রয়েছে চরপুটিমারী ইউনিয়নের সাজলের চর, চিনার চর, বেনুয়ার চর, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার যাতায়াতের একমাত্র দশ আনী নদী ব্রীজটি। গোয়ালের চর ইউনিয়নের সভুকুড়া গ্রামের এক মাটি খেকু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ঘেষে দীর্ঘ দিন যাবৎ মাটি কাটছে। ফলে ওই এলাকার একমাত্র শহীদ মেজর জেনারেল বীর উত্তম ব্রীজটি হুমকিতে রয়েছে। শুধু তাই নয় শহীদ মেজর জেনারেল বীর উত্তম ব্রীজের নীচ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে মাটি উত্তোলন করছে একদল বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে থাকে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সদর ইউনিয়নের পচাবহলা, পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের দু,তিন ফসলি জমি থেকে মাটির উপরিংশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায়। চিনাডুলী ইউনিয়নের বলিয়াদহ ব্রীজের আগারী থেকে যমুনার পাড় ঘেষে কথিত রুহুল আমীন নামে এক মাটি ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাটি কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসন কেন যে নিরব এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসা। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের উলিয়া বাজার সংলগ্ন যমুনা নতুন চরে দেদারছে বালু মাটি কাটছে। এতে হুমকিতে রয়েছে যমুনায় জেগে উঠা নতুন চরের বসতী। ওইসব এলাকার মানুষ আতংকের মধ্যে রয়েছে যেভাবে নতুন চর থেকে মাটি কাটছে আগামী বর্ষা মৌসুমে আবার নতুন করে ভাঙনের সৃষ্টি হলে নতুন চরবাসীর মাথা গুজার ঠাইটুকু থাকবে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ বার বার এলাকার চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের নিটক বলেও কোন লাভ হচ্ছে না। পাথর্শী ইউনিয়নের পশ্চিম গামারিয়া গ্রামের হামিদুর ও মুন্নাফ ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এভাবে মাটি কাটার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, মাটির উপরিংশ কাটার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ও পরিবেশের উপর অনেক প্রভাব পড়ায় মাটির অনেক ক্ষতি হয় এবং মাটি থেকে জৈব সারের পরিমাণ কমে যায়। পরবর্তীতে ওই জমিগুলোকে উর্বর করতে প্রায় ৫-৭ বছর সময় লাগে।